ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২১ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএর শাখার সার্ভেয়ার মোহাম্মদ বাকেরুল ইসলাম বাহদুরকে অন্যত্রে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত সে অভিযোগ এখনো তদন্তাধীন রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখায়। অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় আবারও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় বদলী হয়ে আসেন বিতর্কিত এ সার্ভেয়ার।
অভিযোগ উঠেছে সার্ভেয়ার হিসেবে যোগ দিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের কাছে ঘুষ আদায় করছেন তিনি। ফলে একটি প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাকে। চাপা ক্ষোভ থাকলেও বিপদের আশঙ্কায় এ নিয়ে অভিযোগ দূরের কথা, প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও নারাজ ভুক্তভোগীরা। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আর অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাহিদ ইকবাল।
তথ্য মতে, ২০২১ সালের কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা-২ এ সার্ভেয়ার হিসেবে কাজ করতেন বাকেরুল ইসলাম বাহদুর। সে সময় মহেশখালী আমাবস্যাখালী মৌজায় অধিগ্রহণকৃত অন্য খতিয়ানের সাথে ১৫ নম্বর খতিয়ানের জমি (কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এর এলএ মামলা নম্বর-০৪/২০১৩-১৪) অধিগ্রহণ করা হয়। খতিয়ানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা (মামলা নম্বর ১১৬/১৭) চলমান থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত ঘুষ নিয়ে প্রকৃত ভূমি মালিকদের টাকা না দিয়ে ভিন্ন একটি পক্ষকে চেক প্রদান করেন। অভিযোগ উঠেছে শতকরা ৩৫ টাকা নিয়ে বাকেরুল প্রায় ৫ কোটি টাকা মিচ পেমেন্ট দেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক তার বিরুদ্ধে দুদক কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে দুদক থেকে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা দেন। বিভাগীয় কমিশনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বকে দায়িত্ব দেন। সে সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ অভিযোগের শুনানিও করেন।
তবে অভিযোগ উঠার পরপরই সার্ভেয়ার বাকেরুলকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। একই সাথে ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তার দেয়া ৯টি চেক বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বরাবরে লিখিত অনুরোধ জানান ভূমি অধিগ্রহণ শাখা-২ এর এলএও দীপংকর তঞ্চঙ্গা। বাকেরুল এর বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত চললেও রহস্যজনক কারণে ২০২৩ সালের শেষের দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় বদলি হয়ে আসেন তিনি। এসেই আবারও ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাকে শতকরা ২৫ ভাগ টাকা না দিলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের হয়রানি করেন।
অভিযোগ রয়েছে বাকেরুলকে বদলি করে কক্সবাজার আনতে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেছেন এলএ শাখা কেন্দ্রীক গড়ে উঠা দালাল চক্রের সদস্যরা। ঘুষ আদায় ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি বিসিএস ক্যাডার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রকল্পের সার্ভেয়ার দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে তাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলএ শাখায় কাজ করা অনেকে বলেন, বাকেরুল ইসলাম বাহাদুরকে কক্সবাজারে আনার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন কক্সবাজার এলএ শাখা কেন্দ্রিক আলোচিত দুদকের তালিকাভুক্ত দালাল চক্রের সদস্যরা। এসব দালাল বহিষ্কৃত দুদক কর্মকর্তা মো. শরিফের হয়ে কক্সবাজারে কাজ করতেন। শুধু বাকেরুল নয়, কক্সবাজার এলএ শাখায় কর্মরত সার্ভেররা ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে এমন আচরণ করেন যাতে বাধ্য হয়ে দালালের শরণাপন্ন হতে হয়। এমনকি কোনো দালালের কাছে যাবেন সে দালালের নামও বলে দেন সার্ভেয়ার।
ভুক্তভোগী আব্দু শুক্কুর বলেন, ৩৫ পারসেন্ট টাকা না দেয়ায় আমার চেক আটকিয়ে দেয়। পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চেক আদায় করেছি। তিনি বলেন, ঘুষ না দেয়ায় অধিগ্রহণের চেক আটকিয়ে রাখার অভিযোগ অহরহ। অনেক ভুক্তভোগী তথ্য জানালেও নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দেন।
তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে সার্ভেয়ার বাকেরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, আমার সিনিয়র কানোংগো, এলএও এবং এডিসি রাজস্ব চেক প্রদান করেন, আমি না। আমি সার্ভে করি মাত্র। আমাকে স্ট্যাড রিলিজ কিংবা আমার বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয় আমি কিছুই জানি না। তবে সে সময় আমি নিজেই বদলি হয়ে নিজ জেলায় চলে গিয়েছিলাম।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাহিদ ইকবাল বলেন, তার (সার্ভেয়ার বাকেরুল ইসলাম) বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের বিষয়টি আমার জানা নেই। জানলে তাকে গ্রহণ করতাম না।
বিসিএস ক্যাডার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে তাকে সরানোর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ সামনে চলে আসায় তাকে সরানো হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ