চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিলজুড়ে ছিল তাপপ্রবাহের দাপট। সেই দাপট এখনও অব্যাহত। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও যে তাপপ্রবাহের হাত থেকে নিস্তার পাবে না এ জেলা। তাপপ্রবাহ ৫ মে পর্যন্ত চলতে পারে। রোববার থেকে অবশ্য কিছু জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই বৃষ্টি যে স্বস্তি দেবে না, তেমনিই পূর্বাভাস দিয়েছে এ জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
বুধবার (১ মে) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৩৫.২ ডিগ্রি এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৩ শতাশং। বেলা ১২ টায় ১২ শতাংশ বাতাসের আর্দ্রতার সাথে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.৭ ডিগ্রি। তাতে দেখা যায় আজও জেলাজুড়ে তাপপ্রবাহ থাকবে। এদিন বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৮ ডিগ্রি এবং আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।
বেশ কয়েক দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১-৪৩ ডিগ্রির উপরেই। ছিল অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এমনকি, গত ৪০ বছরে এপ্রিল মাসে এ জেলায় এতো গরমের তীব্রতা দেখা যায়নি।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, চলতি এপ্রিলের ৩০ দিনের মধ্যে অন্তত ১৩ দিনই চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫দিন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। ২০০২ সাল থেকে চুয়াডাঙ্গায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে ২০০২ সালে ৪০ দশমিক ২ (২০ মে), ২০০৩ সালে ৪০ দশমিক ৮ (২৮ মে), ২০০৪ সালে ৪২ দশমিক ৪ (১৩ মে), ২০০৫ সালে ৪৩দশমিক (২ জুন), ২০০৬ সালে ৩৯ দশমিক ২ (৩০ এপ্রিল), ২০০৭ সালে ৩৯ দশমিক ৫ (৩১ মে), ২০০৮ সালে ৪০ দশমিক ৩ (২২ এপ্রিল), ২০০৯ সালে ৪১ দশমিক ৮ (২৭ এপ্রিল), ২০১০ সালে ৪১ দশমিক ৫ (১০ এপ্রিল), ২০১১ সালে ৩৮ দশমিক ৪ (১০ জুন), ২০১২ সালে ৪২ দশমিক ৯ (৪ জুন), ২০১৩ সালে ৪১ দশমিক ৫ (৯ এপ্রিল), ২০১৪ সালে ৪৩ দশমিক ২ (২১ মে), ২০১৫ সালে ৩৯ দশমিক ৮ (২২ মে), ২০১৬ সালে ৩৯ দশমিক ২ (১১ ও ২২ এপ্রিল), ২০১৭ সালে ৩৮ দশমিক ৫ (৩ এপ্রিল), ২০১৮ সালে ৩৯ দশমিক ৭ (১৮ জুন), ২০১৯ সালে ৩৯ দশমিক ৪ (২৮ এপ্রিল), ২০২০ সালে ৩৯ দশমিক ২ (৭ এপ্রিল), ২০২১ সালে ৪০ দশমিক ৫ (২৫ এপ্রিল) ও ২০২২ সালে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৪ ও ২৫ এপ্রিল)।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের মোশারফ আলী (৬৫) সাথে গ্রামে চায়ের দোকানে বসে কথা হলে তিনি বলেন, এত গরম আমার জীবনে দেখেনি।
একই গ্রামের রাজমিস্ত্রি রবিউল হক বলেন, গরমের কারণে কয়েকদিন কাজ করতে যেতে পারছি না। এ রকম গরম এর আগে দেখিনি। রৌদ্রের তাপে খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে চলমান তাপপ্রবাহে তরমুজ ও ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। শহর, পাড়া-মহল্লায় আখের রস, লেবু পানিসহ নানা শরবতের দোকান বেড়েই চলেছে।
আনছার আলী নামের এক ক্রেতা বলেন, মাস খানেক আগে ১৫০ টাকায় এক জোড়া ডাব পাওয়া যেত। এখন ভালো মানের একটি ডাবের দাম চাইছে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া তরমুজের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। রোদের প্রখরে ফল-ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আম, লিছু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে যাচ্ছে। এতে লোকসানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ জমির ধান কেটে কৃষকেরা ঘরে তুলেছেন। বাকি ধানগুলো দানা পর্যায়ে আছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ৮০ শতাংশ ধান মাঠ থেকে সংগ্রহ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, গরমে সবজি খেত চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত সেচ দিতে গিয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, বেলা ৩ টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াম। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।
নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ