এপ্রিল মাসের শুরু থেকে সারাদেশে চলছে তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহ কখনও মাঝারি আবার কখনও তীব্ররূপ ধারণ করছে। এই তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে গোসলে নামছে শিশু-কিশোররা। তবে এসময় অসতর্কতায় প্রাণও যাচ্ছে মানুষের। রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মাসে পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে ১৮ জনের। যার অধিকাংশ শিশু-কিশোর।
সর্বশেষ শনিবার (২৭ এপ্রিল) পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) পদ্মা নদীতে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আর এ মাসে পদ্মা নদীতে ডুবে মারা গেছে ৯ জন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ প্রতিবেদন অনুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর ৭ শতাংশের বেশি ঘটে পানিতে ডুবে। গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন সমষ্টির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে পানিতে ডুবে ৮৮০টি মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বয়স ছিল ৯ বছরের নিচে। এ হার ২০২২ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটেছে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে।
মোহনপুর উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে ওই উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের খড়তা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কর্তা গ্রামের রুবেল হোসেনের ছেলে রজব আলী (৫) এবং নাটোর লালপুর থেকে রুবেলের বাড়িতে বেড়াতে আসা মুকুল হোসেনের মেয়ে কেয়া খাতুন (৫)।
পদ্মা নদীর শ্যামপুর ঘাটে গোসল করতে নেমে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তিন কিশোর মারা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। তারা হলো- কাটাখালী বাখরাবাজ এলাকার রেন্টুর ছেলে যুবরাজ (১২), লিটনের ছেলে আরিফ (১৩) ও নুর ইসলামের ছেলে জামাল (১২)।
এর আগে, গত ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘায় বিয়ে বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে মারা যায় জান্নাত খাতুন (৮)। তবে এখনও ঝিলিক খাতুন (১২) নামের আরেক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) পদ্মা নদীর মুর্শিদপুর এলাকার খেয়াহাটের ডুবে মারা যায় উপজেলার খায়েরহাট গ্রামের সুজন আলীর ১০ বছরের ছেলে সিয়াম হোসেন সজিব, ২০ এপ্রিল বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীতে নৌকায় করে গোসল করতে গিয়ে মারা যান আসাদ হোসেন (১৮) নামে এক তরুণ। রোববার (২১ এপ্রিল) পবায় পদ্মা নদীতে গোসল করতে নামেন বাপ্পি হোসেন (১৬) ও মনির হোসেন (২০)। পরে ডুবে মারা যান তারাও।
এছাড়া গোসল করতে নেমে আল আমিন (১২) নামের এক শিশু এবং পুকুরে সাঁতার শিখতে গিয়ে রানা মিয়া (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে ও বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রামনাথপুর এবং খয়েরবাড়ি গ্রামে পৃথক এ দুর্ঘটনা ঘটে। আল আমিন উপজলার মুলাডুলি ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম বাশারের ছেলে। আর ঈশ্বরদী শহরের পূর্বটেংরী ঈদগাহ পাড়া এলাকার কাশেম আলীর ছেলে রানা মিয়া এবং খয়েরবাড়ি গ্রামের ফোরকান শেখের জামাই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক ঘটনায় নদীতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার তর্ত্তিপুরে এক ও ভোলাহাটের গোহালবাড়িতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া প্রিয়াঙ্কা (১১) শিবগঞ্জ উপজেলার রাণীহাটি ইউনিয়নর কামারপাড়ার রূপ কুমারের মেয়ে ও মো. আজিজুল হক (১১) ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ি ইউনিয়নের রাধানগর কলোনির সুবোধ মিস্ত্রির ছেলে এবং মো. জিহাদ (১১) আব্দুল কাদিরের ছেলে।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবু সামা বলেন, রাজশাহীতে গত কয়েকদিন ধরে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটনা বেড়েছে। আমার ধারণা করছি, গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে কিশোররা নদীতে গোসল করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যারা মারা যাচ্ছেন তাদেন অনেকেই সাঁতার জানতেন না। আবার অনেকেই সাঁতার জানতেন। কিন্তু একজন ডুবে যাচ্ছে দেখে আরেকজন ধরতে গিয়ে দুজনই ডুবে মারা যাচ্ছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। শিশু-কিশোর যারা সাঁতার জানে না তারা যাতে নদীতে গোসলে না যায়, সেদিকে নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এটি করা গেলে মৃত্যু অনেকটাই কমে আসবে।
বাংলাদেশ জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক কোচ আলমগীর হোসেন বলেন, সাঁতার না জানার কারণে দেশে প্রতি বছরই বহু মানুষ মারা যায়। শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের সাঁতারও শেখাতে হবে। কোনো শিশু ডুবে মারা গেলে তার শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। জীবন বাঁচাতে তাই সাঁতার শেখাতে হবে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ