ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

টাঙ্গাইলে রেকর্ড সংখ্যাক চাল উৎপাদন 

প্রকাশনার সময়: ২৯ জুন ২০২১, ১৮:৩১ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২১, ২০:০৯

কৃষিমন্ত্রী আব্দুল রাজ্জাকের নিজ জেলা টাঙ্গাইলে এবার রেকর্ড সংখ্যাক চাল উৎপাদন হয়েছে। একই সাথে বোরো ধান উৎপাদনেও রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় এ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি বছর ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৮ মেট্রিক টন চাল বেশি উৎপাদন হয়েছে। ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ মানুষের (ইপিআই মাইক্রোপ্লান-১৯) জন্য ৭ লাখ ২ হাজার ৫৯৭ মেট্রিক চালের প্রয়োজন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। অপর দিকে ভাল দাম পেয়েও খুশি কৃষক।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর রোপা আমনের চাষ করা হয়েছিলো ৮৮ হাজার ২৫২ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থ বছরে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ছিলো ৮৮ হাজার ২৬০ হেক্টর। সেখানে অর্জন হয়েছে ৮৯ হাজার ৮৬১ হেক্টর। চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়েছে।

এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৬ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৭ লাখ ১ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। সেখানে এক লাখ ৭১ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ২৭ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। গত বছর ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়।

গত বছর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক হাজার ৪৯০ হেক্টর। কয়েক দফার বন্যায় তলিয়ে ৯২৩ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হয়েছিলো। উৎপাদন হয়েছিলো ২ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন চাল। এ বছর ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আউশের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।

কৃষক আনিসুর রহমান আনিস বলেন, ‘এ বছর আমি ৯ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। উচ্চ ফলনশীল জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করায় প্রতি বিঘায় গড়ে আমি ৪০ মন করে ধান পেয়েছি। ৯ বিঘায় প্রায় ৭২ হাজার টাকা আমার খরচ হলেও ৩৬০ মণ ধান পেয়েছি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি। আগে এক বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫ মণ ধান হতো। ধানের বীজ সরকারের পক্ষ থেকে ফ্রিতে পাওয়ায় কৃষিমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’

অপর কৃষক আমির হামজা বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছল ফলন অনেক ভাল হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান ঘরে তুলতে পেরে খুব আনন্দিত। কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাওয়ায় কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কৃষিমন্ত্রীর সহযোগিতায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৪ টির পরিবর্তে ২০ টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। জেলায় চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রার অধিক চাল উৎপাদন হওয়ায় কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি কর্মকর্তাসহ সকলকে তিনি অভিনন্দন জানান।'

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহ্সানুল বাসার বলেন, দেশীয় উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের ভালো ফলন এবং হাইব্রীডের জমি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া এ বছর পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এসব কারণে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ও চাহিদার অধিক রেকর্ড সংখ্যাক চাল উৎপাদন হয়েছে। বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন এবং চাল উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা এ বছর একটু বেশিই লাভবান হবেন।

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে এবার শ্রমিক সংকট না থাকার কারণে কৃষকরা ঠিক মতো ধান কাটতে পেরেছে। এ ছাড়াও জেলায় শতাধিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কর্তন করা হয়েছে। ১ লাখ ৬৮ হাজার কৃষদের প্রনোদনা হয়েছে। এছাড়াও কৃষদের বিনামূল্য সার-বীজ দেয়া হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৬০ জন কৃষক রয়েছে। কৃষিমন্ত্রীর দিক নিদের্শনায় কৃষি সম্প্রাসাধরণ অধিদপ্তরের জেলার এবং উপজেলা পর্যায়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি করোনার মধ্যেও মাঠে কৃষকের সাথে থেকে উৎসাহ প্রদান করেছেন বলে তিনি জানান।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ