রাজশাহীর শাহমখদুম বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য পরমাণু জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে কার্গো বিমানে করে সরাসরি রাজশাহী আনতে চায় তারা। পরে বিমানবন্দর থেকে তা নেওয়া হবে রূপপুরে। এ জন্য শাহ মখদুম বিমানবন্দরে কার্গো বিমান অবতরণের উপযোগী করে এর রানওয়ে সংস্কার করতে হবে। এতে খরচ হবে ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী সপ্তাহে বেসামরিক বিমান চলাচল র্কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদর দপ্তরে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। এখন চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। রাশিয়া থেকে ঢাকায় মালামাল আনার পর পাবনায় পাঠানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সড়কপথে সরঞ্জামাদি নিতে হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুঁকিও থাকছে। এ অবস্থায় রাশিয়া থেকে আসা কার্গো বিমান সরাসরি রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সরকারের হাইকমাণ্ডের কাছে। হাইকমাণ্ড ও ইতিবাচকভাবে দেখছে। রাজশাহী বিমানবন্দর প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। নির্দেশনার আলোকে চলতি বছরের ২০ মার্চ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় একটি চিঠি পাঠিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে। বেবিচক চেয়ারম্যান ৭ মার্চ বিষয়টি আমলে নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। যে ধরনের বিমান নামবে, সেখানে ব্যাপক সংস্কার কাজ করতে হবে। আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, একটি বিশাল আকৃতির কার্গো বিমান অবতরণ করলে যে আকারের রানওয়ের দরকার, তা রাজশাহী বিমানবন্দরে নেই। বর্তমানে বিমানবন্দরটির রানওয়ের চওড়া ১০০ ফিট ও দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফিট। একেকটি কার্গো বিমান বিমানবন্দরে নামলে প্রয়োজন হবে অন্তত দেড়শ ফিট চওড়া রানওয়ে। আর দৈর্ঘ্য লাগবে ৯ হাজার ফিট। তা ছাড়া কার্গো ভবনও থাকতে হবে বাধ্যতামূলক।
সবদিক বিবেচনা করে বেবিচক একটি প্রাথমিক বাজেট তৈরি করেছে। ওই বাজেটের পরিমাণ হবে অন্তত ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ জন্য বিমানবন্দরের আশপাশে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য আগামী সপ্তাহে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে বিমানন্দরের বর্ধিত অংশের একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। সরকারের হাইকমাণ্ডের নির্দেশে মন্ত্রণালয় একনেকে পাঠাবে প্রস্তাবটি।
জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর জ্বালানির জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না বাংলাদেশকে। প্রথমবার জ্বালানি লোড করার পর তা দিয়ে এক টানা ১২ মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এরপর প্রতি বছর একবার করে মোট জ্বালানির এক-তৃতীয়াংশ করে জ্বালানি পরিবর্তনের পর নতুন জ্বালানি লোড করা হবে। তবে তিন বছর পর ১৮ মাস অন্তর নিয়ম মেনে জ্বালানি পরিবর্তন করা হবে। রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই বিদ্যুকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে ।
নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ