প্রায়ই ঝাপটা দিচ্ছে কালবৈশাখী। আঘাত করছে শিলা ও ভারি বৃষ্টি। সব শেষে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ আর লু হাওয়ার দাপট। তবে কৃষকের যেন এর সব কিছুই সয়ে গেছে হাওরের বুকে কাঁপন তোলা সোনারঙা ধানের দোল দেখে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই তারা মেতেছেন ফসল কাটার উৎসবে।
বোরো ফসলের মাঠ ঘুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। সেখানে সোনালি ধানের ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকের প্রশস্ত হাসিতে বোরোর প্রত্যাশিত ফলনের বার্তা পরিষ্কার। কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওরে বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। জেলার কিছু কিছু অংশে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের ঝাপটার পর দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে চাচ্ছেন কৃষক। অনেক জায়গায় অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা থাকায় অনেক কৃষক আধাপাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন। হাওরে পানি ঢোকার আগেই ফসল ঘরে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হাকালুকি তীরের কৃষকরা। হাকালুকি হাওরপাড়ের ভুকশিমইল, কানেহাত, কারেরা, বাদে ভুকশিমইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদ আর উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই কৃষকরা হাওরের জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে আসছেন। অনেক মৌসুমি শ্রমিক ধান কাটতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাওরে এসেছেন।
শ্রমিকরা জানান, এ বছর আবহাওয়া অতিরিক্ত উত্তপ্ত। ধান কাটা ও মাড়াই করে ঘরে তোলা পর্যন্ত খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। হাওরপাড়ের কৃষক সালেহ আহমদ জানান, ধান পাকার আগে অতি বৃষ্টি হলে সমস্যা। উজানের পানি চলে এলে সব ফসল নষ্ট হবে জমিতেই। আরেক কৃষক রুহিন মিয়া জানান, কয়েক দিন আগে ধান পাকতে শুরু করে। এর মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় জমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন তারা। এখন অতিরিক্ত গরম থাকলেও ধান নিরাপদে কাটা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতি বছরই বোরো আবাদে বেশ ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। গত বছর খরায় বোরো ধান আবাদ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বোরো চাষের এলাকায় গভীর নলকূপের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পানি সংকটের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। তবে আবহাওয়া এ সময় উত্তপ্ত থাকে বলে সরকারি উদ্যোগে বিশ্রামাগারের আবেদন জানিয়েছেন তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার ৬৬০ হেক্টর। কুলাউড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই হাওর অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরো উপজেলার ধান কাটা শেষ হবে। এ বছর বোরো ধানের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ জমির ফসল কাটা শেষ করেছেন সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় বোরো ফসলি এলাকা শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া ও বর্ধিত গুরমা হাওরের কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। মাটিয়ান হাওরপাড়ের এক কৃষকের ভাষ্য, ‘আর আধাখান কামই বাকি। বাকিখান কাইটা শেষ করলে শান্তি।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত তাহিরপুরে এ পর্যন্ত ৪৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। ধানের জমির পরিমাণ হিসাবে হাওরে ছয় হাজার ২১০ হেক্টর এবং নন-হাওরে ২২ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এ বছর উপজেলার হাওর ও হাওরের বাইরে মিলিয়ে মোট ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওর অংশে ১৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর এবং হাওরের বাইরে চার হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান-উদ-দৌলা জানান, ভর্তুকিতে যারা হারভেস্টার নিয়েছেন, তারা যদি কেনার তারিখ থেকে তিন বছরের ভিতরে তা অন্য এলাকায় বিক্রি করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ