মুন্সীগঞ্জে দলিল লেখক সমিতির কলম বিরতিতে দুভোর্গে পড়ছে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা দাতা-গ্রহীতারা। সোমবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন দলিল রেজিষ্ট্রির কাজটি সম্পাদন করতে না পেরে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
কয়েকজন দলিল লেখকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল থেকে দলিল লেখক সমিতির সাথে সংশ্লিষ্টরা কলম বিরতি শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। দলিল লেখক সমিতির কলম বিরতির কারণে প্রতিদিন সরকারের ১ থেকে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্টার নুরে তোজাম্মেল হোসেন লেখকদের সাথে অপমানজনক কথাবার্তা বলার কারণে দলিল লেখকরা কলম বিরতি পালন করছেন, লিখছেন না কোনো দলিল। আর এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দলিল তল্লাশিকারকরাও।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দলিল তল্লাশিকারক সমিতির সভাপতি তৈয়বুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাভাবিকভাবে নিয়ম-মাফিক দলিল হবে, অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে দলিল করবে কেন মানুষ। সাব রেজিস্টারের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তিনি দলিল লেখকদের কাজে বিঘœ ঘটাচ্ছে। এ অবস্থায় দলিল লেখার কার্যক্রম আপাদত বন্ধ রয়েছে। এতে দলিল করতে আসা মানুষ প্রতিদিনই চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।
সদর উপজেলায় এধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে জমির দলিল করতে আসা শহরের দক্ষিণ ইসলামপুরের সালাউদ্দিন আহমেদ ও মিরকাদিম পৌরসভার জিরানন্দ পট্রি এলাকার মমতাজ বেগম। তারা জানান, ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার দিন থেকে আজ পর্যন্ত তারা দলিল রেজিষ্ট্রশন করতে পারছেন না।
তারা আরও বলেন, আমাদের মতো অনেকেই প্রতিদিনই দলিল করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী দক্ষিণ ইসলামপুরের সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, পারিবারিকভাবে টাকার বিশেষ প্রয়োজন ছিল বিধায় জমি বিক্রি করতে এসেছেন কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তার মতো অনেকেই এ সমস্যায় পড়েছে।
এবিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান দিদার জানান, দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পেরে দাতা গ্রহীতারা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বর্তমান সদর সাব-রেজিস্টারের অনৈতিক দাবি পূরণ করা সম্ভব না বিধায় দলিল সম্পাদন করা যাচ্ছে না। অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার করে নিয়ে একজন ভালো সাব- রেজিষ্ট্রার নিয়োগ দিলেই দলিল লেখক সমিতির সবাই তাদের কলম বিরতি প্রত্যাহার করবেন।
তিনি আরও বলেন, সদর সাব-রেজিস্ট্রার নুরে তোজাম্মেল হোসেন বলেছেন দলিল করতে আপনাদের (দলিল লেখক) অফিসের উপরে আসতে হবে না পার্টির সাথে আমি নিজে কথা বলে দলিল রেজিস্ট্রি করে দিবো।
এবিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রার নুরে তোজাম্মেল হোসেন বলেন, দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দের অনৈতিক দাবি পূরণ না করায় তারা গত ৭ দিন ধরে দলিল সম্পাদন না করে কলম বিরতি পালন করে আসছেন। এতে করে দুর্ভোগে পরেছে দাতা গ্রহীতারা।
তিনি আরও বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি নামে ভূমির সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং অনুরূপ খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক না থাকলে বা প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে তিনি ভূমি বিক্রয়, দান বা হেবা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর ,পাওয়ার অব অ্যার্টনী সম্পাদন বা রেজিস্ট্রেশন করিতে পারবেন না । কিন্তু এসব বিধি বিধান মানতে নারাজ দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তারা সরকারি সর্বশেষ গেজেটের বিধি বিধান উপেক্ষা করে কলম বিরতির মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয় সদর উপজেলার দুটি পৌর এলাকার জমি রেজিস্ট্রির মূল্য ১০ লক্ষ টাকার ওপরে হলে আয়কর রির্টান উপস্থাপন করতে হবে। উপস্থাপন ব্যতীত জমি নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে না। কিন্তু দলিল লেখকরা উহা মানতে নারাজ।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ