সিরাজগঞ্জের তাড়াশ তালম ইউনিয়নের দেওঘর গ্রামের ৯টি পরিবারকে ১৩ দিন ধরে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে।
সমাজচ্যুত পরিবারগুলো হলো- ইউনিয়ন পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল মজিদ, আলা উদ্দিন, চাঁন মিয়া, আব্দুল মান্নান, আব্দুল আজিজ, আফসার আলী, হবিবুর রহমান, সবদের আলী ও আক্তার হোসেন। সমাজচ্যুত হওয়ায় ওই পরিবারকে ঈদের নামাজ পড়তেও দেওয়া হয়নি।
এতে সমাজচ্যুত ওই পরিবার গুলোর নারী-পুরুষ ও শিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সমাজপতিরা কড়া নির্দেশনা দিয়েছে তাদের বাড়ি যাওয়া যাবে না, তাদের সঙ্গে একসাথে বসা ও কথা বলা যাবে না। এমনকি তাদের কাছে কোনো দ্রব্যাদি বিক্রি কিংবা কেনাও যাবে না। যে এই আদেশ অমান্য করবে তাকেও করা হবে সমাজচ্যুত। মাঠে পাকা ধান থাকলেও তাদের বাড়িতে কেউ শ্রম বিক্রিও করতে পারবে না।
গত ৫ এপ্রিল দেওঘর গ্রামের সমাজপতি শামসুল হক, হাজী ইসসাইল হোসেন, আব্দুল গফুর, আব্দুল মাজেদ, কোরবান আলী, মোতালেব হোসেন, আতাউর রহমান ও জহুরুল মেম্বর এক সালিশি বৈঠক বসিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেওঘর গ্রামের মোতালেব হোসেন ও আতাউর রহমানের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল মান্নান ও তার সহদর চাঁন মিয়ার বসত বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে প্রায় ১ মাস পূর্বে মোতালেব হোসেন ও আতাউর রহমান মিলে আব্দুল মান্নানের একটি আপত্তিকর ভিডিও বানিয়ে মান্নানকে দেখায় এবং ৫ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। আব্দুল মান্নান একজন স্কুল শিক্ষক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে বসেন। কিন্তু তারা সাফ জানিয়ে দেন ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না দিলে ভিডিওটি ভাইরাল করে চাকরিচ্যুত করা হবে। এতে স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান কোনো উপায়ান্ত না পেয়ে গত ১৮ মার্চ তারিখে তাড়াশ থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এ মামলায় আসামি দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। এরই জের ধরে গ্রামের ওই সকল মাতব্বর তাদের পক্ষ নিয়ে ওই মামলার বাদী আব্দুল মান্নান ও তার আত্মীয় স্বজনসহ ৯ পরিবারকে একঘরে করে রাখেন। তাদের একঘরে করে রাখায় ওই ৯ পরিবারের সদস্য ও শিশুরা ১৩ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সমাজচ্যুত হওয়া আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আজ প্রায় ১৩ দিন হলো গ্রামের কোনো লোক আমাদের সাথে কথা বলেছে না। আমাদের বাড়ি থেকে বের হতেও দিচ্ছে না। গ্রামের দোকানে গেলে দোকানদার তাদের কাছে কোনো জিনিসপত্র বিক্রি করে না। এমনকি জমিতে বোরো ধান পেঁকে আছে কিন্তু গ্রামের কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় বেশি বিপদের মধ্যে আছি। এমনকি আমাদের শিশুরা পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারছে না। আমাদেরকে একঘরে করে রাখায় খুব কষ্টে চলতে ফিরতে হচ্ছে। ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
এ ব্যাপারে গ্রাম্য পঞ্চায়েত শামসুল হক ও হাজী ইসমাইল হোসেন জানান, আমাদের সিদ্ধান্ত না মানায় আমরা তাদের সমাজ থেকে আলাদা করে রেখেছি।
তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আব্দুল খালেক জানান, ‘মামলার বিষয়টি জানি। কিন্তু একঘরে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খুব দ্রুতই জেনে ওই গ্রামে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কেউ আমাকে এ বিষয়ে এখনও জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, সমাজচ্যুতির বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলব।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ