১৯ বছরের তরুণ মো. কাওসার হোসেন। সিরাজগঞ্জ বেসরকারি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের টেক্সটাইল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা মো. সাইদুর রহমান একজন মুদি দোকানি। দুই ভাইয়ের মধ্যে কাওসার বড়।
তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের ঝুরঝুরি গ্রামে। একই গ্রামের মোশারফ হোসনের ছেলে মাদরাসা শিক্ষার্থী মারুফ হাসান। অপহৃত হয়ে পরবর্তীতে হত্যার শিকার হয় ১২ বছরের এই কিশোর।
কাওসার হোসেন ও মারুফ হাসান সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তাদের দুই ভাইয়ের বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৮ ফুট বা সাড়ে চারে হাত। অথচ সেই চাচাতো ভাই-ই হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর খুনি! বয়সে বড় চাচাতো ভাই কাওসার হোসেনের হাতেই খুন হলেন কিশোর মাদরাসার ছাত্র মারুফ হাসান (১২)।
বখে যাওয়া কলেজ শিক্ষার্থী কাওসার হোসেন মূলত একটি অত্যাধুনিক মোটরবাইক কেনার জন্য গত ৫ এপ্রিল অপহরণ করেন চাচাতো ভাই মাদাসাছাত্র মারুফ হাসানকে।
জানা গেছে, ওইদিন জুম্মার নামাজে শুধুমাত্র ফরজ দুই রাকায়াতই আদায় করেন কাওসার হোসেন। এ সময় কৌশলে মারুফ হাসানকে সঙ্গে করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
পরবর্তীতে মারুফ হাসানের বাবা মো. মোশারফ হোসেন ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে, তাড়াশ থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর থেকেই থানা পুলিশ, র্যাব-১২ সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তির সহায়তায় মারুফকে উদ্ধারে তৎপরতা চালাতে থাকে।
এরই ধারবাহিকতায় চাঁদ রাতে অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে র্যাবের একটি দল কাওসার হোসেনসহ পাঁচজনকে আটক করে। তাদের আটকের পর জিজ্ঞসাবাদে ঘাতক কাওসার অপহৃত মারুফ হাসানের মরদেহের অবস্থান জানায়।
এরপর ঈদের দিন (১১ এপ্রিল) সকালে মারুফের বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত ঝুরঝুরি বাজারের তালুকদার মার্কেটের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যরা কিশোর মাদরাসা ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য ওইদিনই সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঈদের পরের দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে মারুফের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঝুরঝুরি বাজার এলাকায় পৌঁছালে মারুফের মা-বাবা, বোন ও আত্মীয় স্বজনসহ কয়েকশ নারী-পুরুষের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
এ সময় বিশেষ করে, একমাত্র ছেলে হারানো মা মোছা. চাঁদ সুলতানার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আত্মীয় হয়ে কাওসার আমার যে সর্বনাশ করেছে, আমি তার ফাঁসি চাই। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়- এ কথা বলেই তিনি আবারও ঢুকরে কেঁদে ওঠেন।
এসময় মারুফের বাবা মোশারফ হোসেন ছেলে হারিয়ে নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন মরদেহের পাশে।
এর আগে, মারুফ হাসানকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় চাচাতো ভাই কাওসার হোসেনকে আসামি করে শুক্রবার সকালেই তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মারুফের বাবা মোশারফ হোসেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আসামি কাওসারকে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে সিরাজগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
চাচাতো ভাইয়ের হাতে নিষ্পাপ কিশোর মারুফ হাসানের হত্যাকাণ্ড সামাজিক সহিংসতার অংশ কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আত্মীয়-স্বজনদের মানসিকতার ইতিবাচক উন্নয়নের অভাবেই এমনটি হচ্ছে।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ