ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কক্সবাজারে বেপরোয়া ভূমিদস্যু চক্র, জমি দখলে নিতে ভাঙচুর-লুটপাট

প্রকাশনার সময়: ১২ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৩৭

কক্সবাজার শহরের কলাতলী বেলি হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকায় চিহ্নিত একটি ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি ওই স্থানে সরকারি জমি, সৈকতের বালিয়াড়ি, চলাচলের রাস্তা দখল করে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন তৈরি করে দখল অব্যাহত রেখেছে।

সম্প্রতি চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে আবুল কালাম আজাদ ও রেজাউল করিম নামে ঢাকায় বসবাস করা দুই ব্যক্তির জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকরা ওইসব স্থানে বাউন্ডারি দেয়াল কিংবা পাহারা বসিয়েও থামাতে পারেনি ভূমিদস্যু চক্রটির তৎপরতা। এই চক্রের মূলোৎপাটন করতে অভিযানের পর অভিযান চালিয়েও তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) সহ স্থানীয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঈদের ছুটিতে অফিস-আদালত বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কথিত ডা. মিজানুর রহমান, ডা. ইব্রাহীম খলিল, কামরুজ্জামান লিমন ও মুহাম্মদ নূরুল কাদেরসহ ৫/৬ জনের একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র ব্যক্তি মালিকাধীন একটি জমি দখলে নিতে রাতের আঁধারে ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়েছে। ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে জমির বাউন্ডারি দেয়ালও। ভুক্তভোগী জমির মালিকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও থামাতে পারছেন না চক্রটির অপতৎপরতা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, কলাতলীর বেলী হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকায় একটি বিরোধপূর্ণ জমি দখলে নেয় চক্রটি। জমিটি দখলের পর অনুমোদনহীন একটি বহুতল ভবণ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। ভবনের সামনে থাকা আরেকটি জমি দখলে নিতে বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে থাকা অস্থায়ী ঘরটিও রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দিয়ে যাবতীয় মালামাল লুট করা হয়েছে। মেরিনড্রাইভ সড়ক ঘেঁষে সামনের অংশ কালো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। সেই জমির পেছনে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে চক্রটি।

ঢাকার সাভার এলাকার আবুল কালাম আজাদ ও রাজবাড়ীর মোহাম্মদ রেজাউল করিমের ৬ শতক জমির দেয়ালসহ সবকিছু গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে রাতারাতি সাইনবোর্ড বসিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দখলদারের নাম। সেখানে এই জমিটি নিজের মালিকানাধীন বলে দাবি করেছে কথিত ডাক্তার মিজানুর রহমান, ডা. ইব্রাহীম খলিল, কামরুজ্জামান লিমন, মুহাম্মদ নূরুল কাদেরসহ চক্রটি।

ভুক্তভোগী জমির মালিক রেজাউল করিম জানান, ৬ শতকের জায়গাটি এক বছর আগে জনৈক হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে তারা দুজনে ক্রয় করেন। চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের পর একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন তারা। পাহারায় রাখেন একটি পরিবারকে। কিছুদিন ধরে ওই জমিটির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভূমিদস্যু চক্রটির। ঈদের দিন (১১ এপ্রিল) রাতে ভূমিদস্যু চক্রটি একদল ভাড়াটিয়া দাগী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় বসবাসকারী রেজাউল করিম ও আবুল কালামের ভোগ দখলে থাকা ৬ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত বাউন্ডারি দেয়ালসহ অস্থায়ী ঘরে হামলা চালায়।

এ সময় সন্ত্রাসীরা সবকিছু ভেঙে দিয়ে সেখানে থাকা লাখ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ভুক্তভোগী জমির আরেক মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদের দিন রাতে আনুমানিক ২০-২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আচমকা আমাদের বাউন্ডারি ওয়ালসহ ঘরটি ভাঙতে শুরু করে। এসময় সেখানে পাহারায় থাকা লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদের ধাওয়া দেয় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে জমির সবকিছু গুঁড়িয়ে দিয়ে যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে এই চক্রটি একটি নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে এই দখল অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগ উচ্ছেদ অভিযান ও মামলা করলেও তা বন্ধ করা যায়নি। এর মধ্যে বহুতল ভবন, সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে তৈরি হচ্ছে অনুমোদনহীন ভবন। সম্প্রতি নতুন করে আরও একাধিক স্থাপনা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে চক্রটি।

চক্রটির অনুমোদনহীন বহুতল ভবণ নির্মাণের খবর পেয়ে কউকের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা দেন তারা। কিন্তু তা অমান্য করে নতুন করে ভবনের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের দাবি, রহস্যজনক কারণে প্রকৃত ভূমিদস্যু ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারায় চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা জানান, কলাতলীর একটি শক্তিশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট এর পেছনে রয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ