পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে একদিন আগে অনেক ঘুরে বাজার থেকে জামা-জুতা কিনে আনে কিশোরী মৌসুমী। ইচ্ছে ছিল ঈদের দিন নতুন জামা-জুতা পরে পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে।
তবে ঈদে নতুন জামা-জুতা পরার সেই স্বপ্ন ও সাধ অধরা রয়ে গেল সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মৌসুমীর। মায়ের ওপর অভিমানে কীটনাশক পানে প্রাণ গেল তার।
চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণার পর বাড়িতে এনে পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তানকে দাফন করেন বাবা।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) মর্মস্পর্শী এই ঘটনা ঘটে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের শংকরকাঠি গ্রামে। পার্শ্ববর্তী শংকরকাঠি সিনিয়র দাখিল মাদরাসার ছাত্রী মৌসুমী একই গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর মিজানুর রহমানের মেয়ে।
মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদের জন্য রীতিমত বায়না ধরে মঙ্গলবার বাবার কাছ থেকে ১৩শ টাকা আদায় করে মৌসুমী। সেদিন বিকেলে বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামনগর বাজারে গিয়ে নিজের পছন্দের জামা-জুতা কিনে আনে ১৩ বছরের কিশোরী।
তবে বুধবার সকালে নতুন জামা-জুতা মাকে দেখাতে গেলেই বাধে বিপত্তি। জামা পছন্দ না হওয়ায় মেয়েকে তিরস্কার করেন তার মা। একপর্যায়ে মায়ের তিরস্কার সইতে না পেরে অভিমানে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে সে।
কয়েক মুহূর্ত পরে বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত মৌসুমীকে নিয়ে যায় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পাকস্থলী ওয়াশ করার পর ঘণ্টা দুয়েক স্থিতিশীল ছিল তার অবস্থা। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে পথিমধ্যে পাশে থাকা পিতা ও মায়ের হাতে হাত রেখে শেষ কথা বলেই পরপারে পাড়ি জমায় সে।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত ডা. ত্রিদেব দেবনাথ বলেন, রোজা রাখায় আগে থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল ছিল সে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার ক্ষেত্রেও তার পরিবারের সদস্যরা দেরি করে ফেলে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আনিচুজ্জামান বলেন, তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছোট ছিল মৌসুমী। তার এমন মৃত্যু গোটা এলাকার মানুষকে কাঁদাচ্ছে।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃতদেহ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ