কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে সংঘবদ্ধ মাটি পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রাখায় ‘সংক্ষুব্ধ হয়ে পূর্বপরিকল্পনা মতে’ ডাম্পার ট্রাক চাপা দিয়ে বন বিট কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঘটনায় দায়ের মামলার প্রধান আসামি মো. বাপ্পীকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মাটি পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় উখিয়া থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের উখিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ রাসেল।
গ্রেপ্তার মো. বাপ্পী উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মো. কাশেমের ছেলে। তিনি ঘাতক ট্রাকটির চালক।
এর আগে, গত ১ এপ্রিল ভোরে উখিয়ার হরিণমারা এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছৈয়দ করিম (৩৫) নামে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে এএসপি মোহাম্মদ রাসেল বলেন, মাসখানেকের বেশি সময় ধরে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্র। আর পাহাড় কেটে মাটি বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার ছিলেন বনবিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজল। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে অভিযান চালিয়ে তিনি মাটি পাচারকারী চক্রের ৫টি ডাম্পার ট্রাক জব্দ এবং কয়েকটি মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে চক্রটির লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
গ্রেপ্তার আসামি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বনবিভাগের অভিযানে ট্রাক জব্দ এবং মামলা দায়ের করায় এজাহারভুক্ত ১০ নম্বর আসামি কামাল উদ্দিন ড্রাইভারসহ মাটি পাচারকারীরা বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তারা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে এবং নানাভাবে তাকে (সাজ্জাদুজ্জামান) হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এমনকি তারা সাজ্জাদুজ্জামানকে প্রাণে মারারও হুমকি দেয়।
সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার দিন গভীর রাতে উখিয়ার হরিণমারা এলাকার সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি পাচারের খবরে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সহকর্মী আলী আহমদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এতে হাতনাতে একটি ডাম্পার ট্রাকে করে মাটি পাচার করতে দেখে থামার জন্য নির্দেশ দেন। এসময় ট্রাকটির চালক তাদের (বনকর্মী) বহনকারী মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সাজ্জাদুজ্জামান নিহত হন এবং তার সহকর্মী আলী আহমদ আহত হন।
ঘটনার সময় ট্রাক চালক বাপ্পীর পাশের সিটে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার বসা ছিলেন এবং তার ইন্ধনে বন কর্মকর্তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি চাপা দেয়া হয় বলে সাংবাদিকদের তথ্য দেন এএসপি মোহাম্মদ রাসেল।
গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড় কেটে মাটি পাচারকাজে জড়িত চক্রটির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে এবং এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে কাজ অব্যাহত বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। ওইদিন রাতে এক পর্যায়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়। এরপর গত ১ এপ্রিল ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার জানান, ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের বন্দর থানা এলাকায় মামলার প্রধান আসামি ও ঘাতক ট্রাকটির চালক বাপ্পী আত্মগোপন অবস্থায় রয়েছেন- এমন খবরে পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। এতে সন্দেহজনক স্থাপনাটি ঘিরে ফেললে তিনি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা চালান। এসময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
নিহত বন বিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।
আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে।
এ ঘটনায় পরের দিন ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ