কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুলে ভূমিদস্যুর অবৈধ বালু মহলে সাদেক হোসেন প্রকাশ নোমান (২৮) নামের এক শ্রমিককে এস্কেভেটর দিয়ে পিষে মারার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামুর কলঘর বাজারের এন আলম পেট্রোল পাম্পের দক্ষিণ পাশে আলী হোসেন সিদকারপাড়া সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর তীরে চিহ্নিত ভূমিদস্যু জিয়াবুল সওদাগর ও তার ছেলে জামশেদের বালু-মাটি মহলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নোমান চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাতঘরিয়া পাড়ার বাসিন্দা কবির আহমদের ছেলে। তিনি ভূমিদস্যু জিয়াবুল সওদাগরের অবৈধ বালু মহলে শ্রমিক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে বালু শ্রমিক নোমানকে এস্কেভেটর দিয়ে পুরো শরীর থেঁতলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে মরদেহ নিয়ে লুকোচুরি করেছে জিয়াবুল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
জিয়াবুলের বালু মহল থেকে বালু ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত স্থানীয় বাবুল বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় শ্রমিক নোমান মারা গেছে। জিয়াবুলসহ তার চক্রের সদস্যরা নিহত নোমানের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে একটি অঙ্কের টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে।
খুটাখালীর ১নং ওয়ার্ড আ. লীগের সভাপতি ফজলুল মান্নান বলেন, নিহত নোমানের মা নেই। বাবাও এতেকাফে বসেছেন। কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তার স্ত্রী মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো। আমরা বাঁধা দিয়ে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছি। প্রশাসন তদন্ত করলে রসহ্যের জট খুলে যাবে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিহত নোমানের পরিবারের সঙ্গে যেগাযোগের চেষ্টা করেও তারা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জিয়াবুল ও তার ছেলে জামশেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে নিউজ না করতে পরে বিভিন্নভাবে তদবির করে ভূমিদস্যু চক্রটি।
এ বিষয়ে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, বালু মহলে শ্রমিক নিহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়। এস্কেভেটরের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাকঁখালী নদীর পাড় জুড়ে শোভা পাচ্ছে বেগুনসহ নানা প্রজাতির গাছ। লাগোয়া সবুজ ধানক্ষেত। তবে নয়নাভিরাম এই সৌন্দর্যের শত্রু অয়ে দাঁড়িয়েছেন জিয়াবুল সওদাগর ও তার ছেলে জামশেদ। এস্কেভটর চালিয়ে ক্ষত বিক্ষত করছেন ফসলি জমি। চড়া দামে ওই মাটি বিক্রি করছেন ইটভাটা, নিচু জমি ভরাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কাজে।
ফলে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা, আর কমেছে শস্য উৎপাদন। গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ফুয়ারচরে প্রায়ই ২০ একর ফসলি জমি রয়েছে। বেশ কয়কবছর ধরে এখনকার নদীসহ ফসলি জমির মাটি এস্কেভেটর দিয়ে কাটছেন এই গ্রামের জিয়াবুল ও তার ছেলে। নিরীহ ও গরীব কৃষকদের হুমকির মুখে ফেলে এই কাজ করেই গেল কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে পরিবারটি।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ফসলি জমির বুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছেন স্থানীয় জিয়াবুল ও তার ছেলে জামশেদ। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
গেল সপ্তাহে সরজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির মাঝ দিয়েই ছুটছে মাটি ভর্তি ট্রাক। ট্রাকের দাগ অনুসরণ করে একটু সামনে এগোতেই চোখে পড়ে ফসলি জমি থেকে ৮/১০ ফুট নিচু কয়েকটি গর্ত। তার সঙ্গে লাগানো অত্যাধুনিক এস্কেভেটর দিয়ে জমির মাটি কাটার দৃশ্য। সে মাটি ভরা হচ্ছে ডাম্পারে। তবে এই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে গেলেই বাঁধা দেন এক যুবক।
সেই বাঁধাকে পাশ কাটিয়ে গ্রামের দিকে যেতেই স্থানীয় কৃষক করিম বলেন, ফুয়ারচরে গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বাবা-ছেলে মিলে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন। এখন তারা বেড়িবাঁধসহ নদীর পাড়ের মাটি কাটছেন। ফলে জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় আমাদের আশপাশের জমিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া মাটি-বালু পরিবহনের কাজে ভারি যান (ডাম্পার-ট্রাক) চলাচলের কারণে ধুলো পড়ে পুরো মাঠের ফসলসহ বাড়ি-ঘর নষ্ট হয়ে গেছে।
একই গ্রামের ভুক্তভোগী শামশুল আলম বলেন, খননযন্ত্র দিয়ে ফসলি জমি, নদীর পাড়ের মাটি কেটে বড় বড় ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও কজের কাজ কিছুই হয় না।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ