বৃদ্ধ আব্দুল হামিদ মাস্টার। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। অনেক ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। গ্রামের জমি-বসতভিটাসহ শহরে ছিল তার দোতলা বাড়ি। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুখেই কাটছিল তার সংসার। হঠাৎ স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলেকে বিয়ে করান।
তবে জমিজমাসহ শহরের দোতলা বাড়িটি একমাত্র ছেলে আল-আমিনের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরই, বাড়ি ছাড়তে হয় হামিদ মাস্টারকে। ছেলে ও পুত্রবধূ মারধর করে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় তাকে। এরপর থেকেই হামিদ মাস্টারের ঠাঁই মেলে মেহেরুন্নেছা বৃদ্ধাশ্রমে।
ওই বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখা হয় হামিদ মাস্টারের সঙ্গে। জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে অতীতের কথা মনে করে হামিদ মাস্টার বলেন, আমার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের চক বিরাহিমপুর গ্রামে। আমি এক হতভাগা বাবা। আমার একটা মাত্র ছেলে। আমি তাকে মুফতি করার আশায় বগুড়ার স্বনামধন্য জামিল মাদরাসায় ভর্তি করেছিলাম। ছেলের নাম রেখেছিলাম আল-আমিন (বিশ্বাসী)। সেখানে কিছুদিন পড়ার পর সবকিছু বাদ দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে এসে বিভিন্ন অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। কিছুদিনের মধ্যে আমার স্ত্রীও মারা যায়। এরপর ছেলেকে বিয়ে করাই। বিয়ের কিছুদিন পর আমার ছেলে ও তার স্ত্রী মিলে বিভিন্ন কৌশলে আমার কাছ থেকে ছয় বিঘা জমি, বাড়ি, শহরের দোতলা বাড়ি লিখে নেয়। লিখে নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ছেলে আর ভাত দেয় না। ছেলের বউ একাধিকবার আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। শত অপমান সহ্য করেও বাড়িতে ফিরে গেলে একদিন আমাকে অনেক মারধর করে ছেলের বউ। পরে ছেলে এসে আমার গলাটিপে ধরে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরে আশেপাশের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর আমি আর বাড়ি ফিরে যাইনি। পরে লোকমুখে শুনে গোবিন্দগঞ্জের ছোট সোহাগী গ্রামের মেহেরুন্নেছা বৃদ্ধাশ্রমে আসি। সেই থেকে এখানেই আছি।
ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি- আক্ষেপ করে এই শিক্ষক বলেন, গোবিন্দগঞ্জের বিশুবাড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলাম। ২০১২ সালে অবসর গ্রহণের পর পেনশনের চার লাখ টাকা পাই। সেই চার লাখ টাকাও ছেলের কিডনির পাথরের অপারেশনে ব্যয় করেছি। এতকিছু করার পরও একমাত্র ছেলের সংসারে আমার ঠাঁই হলো না, এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ