দেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করেও বাঁচানো গেল না শামীমা আক্তার (৩৪) নামে এক নারীকে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে ১৫ মাস বেঁচে থাকার পর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) তার মৃত্যু হয়।
নিহত শামীমার বড় ভাই শাহাজাদা হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শামীমা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বিপিন রায়ের পাড়ার বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মরহুম সালেহ আহমেদের মেয়ে।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে জানাযা শেষে শামীমার মরদেহ গোয়ালন্দ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শামীমার ভাই শাহজাদা জানান, দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের দান করা দুটি কিডনির একটি তার বোনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এরপর দুই-তিন মাস ভাল থাকলেও, তারপর থেকে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যে সমস্যাগুলো কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে ছিল না।
তিনি আরও জানান, শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মাসের মার্চের ৫ তারিখে তার বোনকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বোনের শয্যার পাশেই ভর্তি করা হয় একজন যক্ষ্মা রোগীকে। সেখানে মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু ১৮ মার্চ রাতে অতিরিক্ত ফ্যানের বাতাসে সে কাঁপতে শুরু করে। নার্সদের অনুরোধ করলেও তারা ফ্যান বন্ধ করতে দেয়নি। এক পর্যায়ে বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে উচ্চ মাত্রার ওষুধ দেওয়ায় সে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ডায়ালিসিসও করেছিলাম। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার বোন মারা যান।
তবে সারাহ ইসলামের চোখের কর্নিয়া দেওয়া হয়েছিল যে দুজনকে, তারা এখন ভালোভাবেই চোখে দেখতে পান বলে জেনেছি। আমার বোন না বাঁচলেও আমরা সারাহ ইসলাম ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ। সারাহ ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
এদিকে শামীমার ভাই শাহজাদা আরও অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে তার বোনকে ভাল চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় নি। তবে একমাত্র ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল স্যার একটু চেষ্টা করেছিলেন। সেখানে একটা টেস্ট পর্যন্ত ফ্রি নাই। আসার সময় আইসিইউ এর ৪০ হাজার এবং মেডিসিনের আরও ৪০ হাজার টাকার দুটো বিল হাতে ধরিয়ে দিয়ে মরদেহ আটকে রেখেছিল। কিন্তু সেই বিল মেটানোর সামর্থ্য আমাদের ছিল না। কর্তৃপক্ষ কি পারত না আমাদের ফ্রি করে দিতে? পরে দুলাল স্যারের রেফারেন্সে এবং কয়েকজন সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে ২/৩ দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবো মর্মে কাগজে স্বাক্ষর রেখে মরদেহ হস্তান্তর করে।
অপরদিকে শামীমার কিডনি প্রতিস্থাপনকারী চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ৬ মাস শামীমা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানের বাইরে ছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিন সপ্তাহ আগে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ এবং হেপাইটাইসিস সি ধরা পড়ে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অস্ত্রোপাচারের পর ফলোআপে থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু সে বাড়িতে গিয়ে আর ফলোআপে আসেনি। আসার পর দেখি ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে। একেবারে শুকিয়ে গেছে। আমাদের এখানে ভর্তি করার পর তার লাংয়ে ইনফেকশন ধরা পড়ে। পাশাপাশি সি ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।
শামীমার চিকিৎসা সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে শামীমার হাতে ২৫ লক্ষ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। প্রক্রিয়া শেষে সঞ্চয়পত্র হতে প্রতি মাসে ২০ হাজার বাবদ বিগত ৫ মাসে ১ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। যা এতদিন তার চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘বিনামূল্যেও কিডনি পেয়ে দুশ্চিন্তায় শামীমা’ নামে দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারিতে বিএসএমএমইউতে ‘ব্রেইন ডেড’ ঘোষিত তরুনী সারাহ ইসলামের দান করা দুটি কিডনির একটি প্রতিস্থাপন করা হয় শামীমার শরীরে। অপর একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় হাসিনা আক্তার নামে অন্য রোগীর শরীরে। তিনিও মারা যান গত বছরের অক্টোবর মাসে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ