ঈদকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামদানি পল্লীর তাঁতিরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে অভিজাত এ বস্ত্র বুননের কাজ। তবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা কাপড়ের ভালো দাম পেলেও সাধারণ তাঁতিরা সঠিক দামে কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না বলে অনেকটা হতাশ। তা ছাড়া ই-কমার্স বা অনলাইনে মাধ্যমে নিন্মমানের কাপড় বেশি দামে বিক্রি করে জামদানি কাপড়ের মান এক শ্রেণির মানুষ নষ্ট করছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে সব কিছু মিলিয়ে এবার ঈদে প্রায় ১শ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন বিসিক জামদানি শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়ার বিসিক জামদানী পল্লীর তাঁতিরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাহারী রকমের জামদানি শাড়ি বুননের কাজ করে যাচ্ছেন ছোট থেকে বড় বিভিন্ন বয়সের তাঁতিরা।
এ পল্লীকে ঘিরে সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত তারাবো নোয়াপাড়া জামদানী পল্লীতে ও পাশের ডেমরা বাজরে বসে পৃথক দুটি জামদানির হাট। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীর সাথে লোকজন আসেন তাদের পছন্দের কাপড় কিনতে।
এবার ঈদে বাড়তি আকর্ষণ জুড়াতে কারিগররা জামদানির ডিজাইনে এনেছেন নতুনত্ব। তৈরি হচ্ছে ফুলতেরছি, ছিটার তেরছি, ছিটার জাল, সুই জাল, হাটু ভাঙ্গা, তেরছি, ডালম তেরছি, পার্টিরজাল, পান তেরছি, গোলাপ ফুল, জুই ফুল, পোনা ফুল, শাপলা ফুল, গুটি ফুল, মদন পাইরসহ প্রায় শতাথিক নকশার জামদানি। এসব জামদানি শাড়ির দাম ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।
জামদানি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, কিছু অসাদু ব্যবসায়ী নিন্মমানের কাপড় জামদানি কাপড় বলে ই-কমার্স বা অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি করে জামদানির মান নষ্ট করছে।
জামদানি তাঁতি জাহাঙ্গীর বলেন, দেশে জামদানির চাহিদা ব্যাপক থাকলেও স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ তাঁতিরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না।
জামদানী পল্লীর প্রবেশদ্বার ও পল্লীর ভিতরে সড়কের বেহাল দশা থাকায় আগের মতো ক্রেতা পল্লীতে দেখা যাচ্ছে না। তবে সব কিছু মিলিয়ে এবার ঈদে বিপুল পরিমাণ জামদানি কাপড় বেচাকেনা হবে বলে জানান জামদানি তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা।
বিসিক সূত্র থেকে জানা যায়, নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লীতে রয়েছে ৪০৭টি প্লট। এ পল্লীকে ঘিরে আশপাশে গড়ে উঠেছে আরো অনেক জামদানি তৈরির কারখানা। পল্লীতে সাড়ে ৩ হাজার সহ সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৭ হাজার শ্রমিক জামদানি তৈরির কাজে নিয়োজিত।
এব্যাপারে বিসিক জামদানি শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, জামদানি চাহিদা বিগত সময়েও ছিল এখনো রয়েছে। সরাসরি ছাড়াও ই- কমার্সের মাধ্যরে জামদানি কাপড় বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে বিসিকে পক্ষ থেকে শাহাবাগের জাতীয় যাদু ঘরে ৩০ মার্চ থেকে ৫ দিনব্যাপী শুরু হয়েছে জামদানি কাপড় প্রর্দশনী ও মেলা। এখানে বিসিক থেকে ৩০ জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।
তিনি জানান, ঈদে প্রায় ১শ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হবে বলে আশাবাদী। এখানে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার দামের কাপড় তৈরি হচ্ছে। বিসিকে পক্ষ থেকে পল্লীর রাস্তা ঘাটের সংস্কারের কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি এ কাজ সম্পন্ন হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ