ঢাকা, রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১১ রজব ১৪৪৬

ঢাবি-চবিতে চান্স পেলেন দিনমজুর বাবার মেয়ে তাহমিনা 

প্রকাশনার সময়: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৪

তাহমিনা আক্তার মুন্নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়া অভাবী পরিবারের এক মেধাবী মুখ। স্বপ্ন নিয়ে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠা তার। তার সেই স্বপ্ন পূরণে এখন বড় বাধা দারিদ্র্যতা। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষা করাতে হতদরিদ্র পরিবারটি পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

মেয়েটির বাবা একজন ভ্রাম্যমাণ ছোট ফল ব্যবসায়ী এবং দিনমজুর। বাবা কখনো অভাবের কথা বুঝতে না দিলেও অভাবের তাড়না লেগেই থাকত তাদের সংসারে। তবুও অভাব মেয়েটির স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। গরীব বাবার মেধাবী মেয়ে মুন্নীর স্বপ্ন একদিন অভাব পূরণ হবে পুলিশ প্রশাসনের বড় অফিসার হয়ে।

প্রতিদিন সকালে মুন্নির গর্বিত বাবা ভ্যান নিয়ে ফল বিক্রি করতে বের হন। শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় ব্যবসা চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে তার। ছয় সদস্যের সংসারে এক স্ত্রী দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। যেখানে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুই মুঠো ভাত দেওয়া দুষ্কর, সেখানে সন্তানদের নিয়ে তার রয়েছে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। ভ্যানে করে ফল বিক্রি করেও তার ৪ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ ইদিলপুরের ফল বিক্রেতা মো. মিজান।

কিন্তু বাবার স্বপ্ন লালন করে ফল বিক্রেতার মেয়ে তাহমিনা আক্তার মুন্নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। গোটা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ অর্জনে স্থানীয়রা তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।

তাহমিনা এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বি- ইউনিটে ১৮১তম এবং সি ইউনিটে ৩১২তম স্থান অধিকার করেছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ৭৯তম এবং বি ইউনিটে ৪৫৪তম স্থান অধিকার করেন।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তাহমিনার বাবা-মা জানতে পারেন তাদের মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ খবর শুনে অভিভাবকদের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। এগুলো আনন্দের কান্না। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ।

জানা যায়, জন্মসূত্রে তাহমিনার বাবার বাড়ি চাঁদপুরে। ছোটবেলায় তিনি সীতাকুণ্ডে চলে আসেন। প্রথমে চায়ের দোকানে কাজ করলেও ধীরে ধীরে ভ্যান চালিয়ে ছোট ফলের ব্যবসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে ইদিলপুর গ্রামের একটি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।

একদিকে সংসারের ভরণপোষণ, অন্যদিকে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। এটি উভয় বিপদের মধ্যে ভারসাম্যের মতো। তিনি মনে করেন, আল্লাহ তার মেয়ের শিক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা করবেন।

তাহমিনা আক্তার মুন্নী বলেন, আমার বাবা দিনমজুর। ভ্যানে করে বিভিন্ন জায়গায় ফল বিক্রি করেন। আমার বাবার স্বপ্ন আমরা যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারি। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য পড়াশোনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার পড়াশোনার খরচ যোগাতে পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে না খেয়ে দিন কাটাতেন। আমার পরিবার ছাড়াও প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন আমাকে আমার পড়াশোনায় অনেক সহায়তা করেছে। এছাড়াও আমি যে বাসায় থাকি তাদের ছোট ছেলে মঈন উদ্দিন মুসলিম চাচা এবং তার পরিবার সবসময় আমাকে এবং আমার পরিবারকে অনেক সমর্থন করেছে। ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের অবদান আমি কখনো ভুলব না। তাদের অনুপ্রেরণাতেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি।

তাহমিনার স্বপ্ন বড় হয়ে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার হবে। কেন তাহমিনা বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হতে চান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা দিনমজুর, যা পায় তাই করেন। এছাড়া ভ্যানে করে ফল বিক্রি করেন। কিন্তু রাস্তায় ভ্যানে করে ফল বিক্রি করতে গিয়ে বহুবার পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাই গরীব অসহায় মানুষের সেবা করার জন্য পুলিশের মহৎ পেশা বেছে নিব।

তাহমিনার মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি যে বাড়িতে থাকি মালিকের ছোট ছেলে আমাদের প্রতি আন্তরিক। কখনো বাসা ভাড়া নেননি। উল্টো তিনি আমার ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবেশী ও বাড়ির মালিক মঈন উদ্দিন মুসলিম বলেন, মিজান ভাই দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাড়িতে থাকেন। তিনি অত্যন্ত সৎ এবং পরিশ্রমী। সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তার মেয়ে তাহমিনা খুবই মেধাবী। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তাহমিনার স্বপ্ন বড় হয়ে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার হবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সে একদিন দেশ ও জাতির সুনাম অর্জন করবেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, এক ফল বিক্রেতার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সব সময় গরীব, অসহায় ও মেধাবীদের পাশে আছে। তবে মেয়েটির ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন করা হলে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ