কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর তোতকখালী এলাকায় চিহ্নিত একটি ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি ওই স্থানের খাসসহ ব্যক্তিমালিকাধীন জমি দখল করে বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে স্থানীয় নুরুল আলম কন্ট্রাক্টরের জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, তোতকখালীর মাঝের পাড়া এলাকায় মোহাম্মদ কালুর ছেলে জহির আলম (৪৫) ও এরশাদ আলীর ছেলে ছলিম উল্লাহ (৫৫) নেতৃত্বাধীন ভূমিদস্যু চক্রটির তৎপরতা থামাতে জমি মালিকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের দ্বারস্ত হয়েও থামাতে পারছেন না তাদের। এই চক্রের মূলোৎপাটন করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ জনপ্রতিনিধিদের সালিশি রায়ও তেমন কোন পরিবর্তন আনতে পারছে না। উল্টো শনিবার সকালে জমি দখলে নিতে নুরুল আলম কন্ট্রাক্টরের ছেলে সাগরের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায় তারা।
ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসী থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্থানীয় এরশাদ আলীর ৬ ছেলে। তিনি মারা যাওয়ার সময় তোতকখালীর মৌজার বিএস ৫৮, ৫৯, ৬০, ১৩৮, ২৭০, ৪১৯, ৪৫১, ৪৫৮ নম্বরের আটটি খতিয়ানে মোট ১.৬৫২৭ একর জমি রেখে গেছেন। যা বণ্টনে এক ছেলের ভাগে ৭৭.৬৩ কড়া করে পাবে। কিন্তু ছলিম উল্লাহ তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া অংশের যাবতীয় জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যান। শুধু তাই নয়, ছোট ভাই নুরুল আলম কন্ট্রাক্টরের অংশও নানা কূটকৌশলে বিক্রি করে দেন। শুধু নুরুল আলমের জমি দখল কিংবা বিক্রি করে ক্ষান্ত হননি। তার বাড়ি সামনে অবশিষ্ট থাকা ৩০ কড়া জমির উপরও লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ছলিমের। এরপর থেকে জমিটি দখলে নিতে একের পর ফন্দিফিকির আঁকতে থাকেন তিনি।
নুরুল আলম কন্ট্রাক্টর বলেন, বাবা মারা যাওয়ার দুই দশক হয়েছে। নিজে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করেছি বলে বাবার রেখে যাওয়া জমিজমার দিকে কখনো তাকাইনি। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমার ভাই ছলিমসহ চক্রটি তাদের অংশের পাশাপাশি আমার অংশটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। আমার বাড়ির সামনে থাকা অবশিষ্ট জমিটিও দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এমতাবস্থায় ওই জমি ছলিমের দাবি করে পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দেন। বিষয়টি আমলে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ, ইউপি সদস্য আনজুন আরাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে দেখে, আমার ৮০.১৩ কড়া জমি দখলে নেই, তা বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। আমার অংশে ৮০.১৩ কড়া কম থাকা জমি ফিরিয়ে দিতে একটি রায় দেন। এখন ওই জমি ফেরত দেওয়াতো দুরের কথা; উল্টো আমার বাড়ির সামনে থাকা অল্প জমিও দখলে নিতে হামলাসহ নানা হয়রানি করছেন।
নুরুল আলম কন্ট্রাক্টরের ছেলে সাগর জানান, বাড়ির সামনে থাকা অল্প জমির বাউন্ডারি দেয়াল দিতে কাজ করতে যায়। এসময় ছলিম ও জহির এসে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল করলে সদর থানার এসআই সজলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত দেড় যুগ ধরে ছলিম, জহিররা বিভিন্ন মানুষের জমি দখল-বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন খতিয়ানের নানা দাগ ব্যবহার করে ওই জমিটিও একজনকে বিক্রি করে দখল বুঝিয়ে দেন। পরে তারা সেখানে তাদের অংশ না থাকার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই জমির দখল ছেড়ে চলে যান। এছাড়াও জহির বিরুদ্ধে এলাকার বহু নারীর সর্বনাশ করার অভিযোগ বেশ পুরনো। তার ফাঁদে পা দিয়ে দরিদ্র পরিবারের একাধিক নারী নিঃস্ব হয়েছেন।
ছলিম দুষ্টপ্রকৃতির লোক মন্তব্য করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনজুন আরা বেগম বলেন, ছলিম পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিকভাবে তাদের বাবার জমি জমা সমান বণ্টন করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে আমরা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ও রাশেদের পরামর্শে কাগজপত্র যাচাই করে একাধিক সার্ভেয়ারের মাধ্যমে সরজমিনে টেবিল এস্কেল মাপসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা মাপ কাঠি করে দেখা যায় যে, মো. কালু, বদিউর রহমান, ছবিউর রহমান, সলিম উল্লাহ গং তাদের বাবার কাছ থেকে যা জমি পাবে তার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছে। বর্তমানে ভোগ দখলে আরও কিছু জমি জোরপূর্বক দখলে রেখে দিয়েছে। এমতাবস্থায় আইনজীবী ও টেবিল সার্ভেয়ারগণের রিপোর্ট মোতাবেক বিবাদী নুরুল আলমের ভোগ দখলে ৮০.১৩ কড়া জমি কম আছে। তা বের করে দিতে তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা না মেনে উল্টো জমি পাবে দাবি করে হামলা করছে বলে শুনেছি।
এছাড়াও কাগজপত্র ঘেটে দেখতে পেয়েছি, ছলিম একটি জমি একাধিকবার বিক্রিও করেছেন। তিনি আমাদের কাছে বিচার দিয়ে জমি বের করে দেওয়ার ভয়ে এখন নিজেই আমাদের রায় মানছে না।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছলিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ