শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার লিটন লস্করকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় লিটন লস্কর ও শিক্ষক সঞ্জয় মজুমদারসহ বিদ্যালয়ের আরও ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষার্থীর মা।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ (রোববার) বিদ্যালয় ছুটির পরে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ওই শিক্ষার্থীকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য লিটন লস্কর এবং বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক সঞ্জয় মজুমদার।
ঘটনার পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. গনি ও অন্যন্য শিক্ষকরা বিষয়টি গোপন রাখার জন্য শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে গত বৃহস্পতিবার তার মা ও খালাকে ধর্ষণের বিষয়টি জানায়। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে শরীয়তপুর সদর হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কারও সাথে কোনো কথা বলছে না। তবে তার হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া। সেখানে ধর্ষণের বিবরণ লেখা ছিল। কারা তার সাথে খারাপ আচরণ করেছে জানতে চাইলে সে ইউপি সদস্য লিটন লস্কর ও শিক্ষক সঞ্জয় মজুমদারের নাম লিখে দেয়।
ভুক্তভোগীর মা জানান, আমার মেয়ে কিছুদিন যাবত কারো সাথেই ঠিকমতো কথা বলছিল না এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করছিল না। গত বৃহস্পতিবার আমার মেয়েকে বেশি চিন্তিত দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে এক পর্যায়ে আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলে এবং সম্পূর্ণ বিষয়টি আমাকে খুলে বলে। তার সাথে দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের কাজ হচ্ছিল বলে আমাকে জানায়। আমার মেয়ে লিটন লস্কর ও সঞ্জয় স্যারের কথা বলেছে। তারাসহ অন্যান্য শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই আমার মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করে আসছিল। প্রধান শিক্ষক গণি স্যার আমার মেয়ের গলা টিপে ধরছে এবং গলায় ছুরি ধরে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এতদিন আমার মেয়ে ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। আমার মেয়ের সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ভুক্তভোগীর খালা বলেন, আমার ভাগ্নি সব খুলে বলেছে। মেম্বার লিটন লস্কর ও সঞ্জয় স্যার ওর সাথে খারাপ কাজ করছে। ও ভয়ে কিছু বলতে পারছে না।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. গনির কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি গলায় ছুড়ি ধরার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ছুটিতে, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না ‘
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার দেওয়ান বলেন, এই ধরনের অন্যায়ের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তার কঠিন বিচার করা হোক এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন হোক এটাই আমি চাই।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিতু আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার অল্প বয়সী একটা মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত দেখা যাচ্ছে। আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছি, এগুলোর রিপোর্ট হাতে পেয়ে মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নড়িয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে আমি রাতেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ভিকটিমের মায়ের লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রধান অভিযুক্ত লিটন লস্করকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ