চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাঠে প্রান্তরে, রাস্তার পাশের ‘বনজুঁই’ সৌরভে সুভাষিত করে তুলছে মানুষের মনকে। রাতে আঁধারে ছড়াচ্ছে সুভাষিত সৌরভ। ফুলগুলো সহজেই নজর কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয়দের। এই ফুল দিনে ফোটে এবং রাতে ছড়ায় সুন্দর সৌরভ।
বসন্ত ঋতুতে মাঠে প্রান্তরে যে ফুলগুলো সহজেই মানুষের নজর কাড়ে তন্মধ্যে ‘বনজুঁই’ অন্যতম। এটি বনজ ফুল হলেও সৌন্দর্যের যেন কমতি নেই। দেখে মনেই হবে না এটি অবহেলিত কোনো বনজ ফুলের উদ্ভিদ। অনেকের কাছে ‘বনজুঁই’ বা ভাটাফুল, ভাটিফুল, ঘেঁটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও অধিক পরিচিত এ ফুল।
দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মিরসরাইয়ের গ্রামীণ সড়কের আনাচে কানাচে সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে নজর কাড়ছে এ ফুলটি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার জন্য এটি ক্যানসার দমনে সহায়ক। এছাড়াও কৃমি, চুলকানি, কোলেস্টেরল ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে এটি সাহায্য করে। তবে এটি খুব বেশি স্বীকৃত নয়।
জানা গেছে, ‘বনজুঁই’ এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাঁপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল থাকে।
বনজুঁই সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বতি। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী। পলাশ, শিমুলের মতো বিশালত্ব না থাকলেও এ ফুলের সৌরভ বসন্তজুড়েই রাঙিয়ে যায় বন।
সরেজমিনে মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে ঘুরে দেখা যায়, সড়কের কিনারায় ফুটে আছে ‘বনজুঁই’। অযত্নে ও অবহেলা জন্ম নেওয়া এ ফুল সড়কে চলাচলরত পথচারিদের মাঝে সুবাস ছড়াচ্ছে। দেখে কোনোভাবে বুঝার উপাই নেই এটি একটি বনফুল। অন্য আট দশটি ফুলের মতো এ ফুলের সৌন্দর্যে কোনো অংশে কমতি নেই। ফুলের মাঝখানে পুংকেশর পাঁপড়ি, পাত, কাণ্ড ফুলটিকে নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে। অবহেলিত বন, জঙ্গল, রাস্তা-ঘাট-পথের কিনারাসহ গ্রামীণ জনপদে এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন যে কেউই। বসন্ত থেকে শুরু করে গ্রীষ্ম পর্যন্ত এ ফুল ফুটতে দেখা যায়।
সাহেরখালী ইউনিয়নের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, ‘বনজুঁই’ ফুল গাছকে আমাদের স্থানীয় ভাষায় বাইদ গাছ বলে থাকি। এ গাছ পোকামাকড় তাড়াতে সহায়ক। বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণে এ গাছ অনেক কার্যকর। বীজ সংরক্ষণের পর বীজের সাথে সংরক্ষিত স্থানে এ গাছগুলো রাখলে বীজে পোকার আক্রমণ কম হয়। গ্রামের অনেক কৃষক এখনও এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বীজ সংরক্ষণ করে থাকে।
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের কৃষক আবদুল করিম বলেন, একটা সময় ‘বনজুঁই’ ফুল আরও অনেক বেশি দেখা যেতো।
এখনও দেখা যায়, তবে আগের চেয়ে খানিকটা কম। খেত খামারের কিনারা, বাড়ির পাশে, গ্রামের রাস্তার ধারে, পাহাড়ে কিনারায়, রেললাইলের ধারে থোকায় থোকায় ফুটে এ ফুল। ফুলের সুবাস অনেক মিষ্টি দেখতে অনেক সুন্দর এ ফুল।
স্কুল শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বনজুঁই’ দেখে কোনোভাবেই মনে হবে না এটি একটি বুনো ফুল। বাংলাদেশের মানুষের একেবারে চোখের সামনে অনাদরে থাকে এ ফুল। ঋতুরাজ বসন্তে দেখা যায় এই ফুল।
ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে, রাস্তার ধারে, এখানে-সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে থাকে ‘বনজুঁই’। এ ফুলটি বাংলাদেশের আদি ফুল। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ফুলের দেখা মিলে। সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বতি এ উদ্ভিদ।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ