ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকার ১৩ কিমিতে যানজটের শঙ্কা

প্রকাশনার সময়: ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬:০০

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। ঈদসহ যেকোন উৎসবের ছুটিতে এ মহাসড়কে যানজট এবং ভোগান্তি নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে টাঙ্গাইল পুলিশ প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগে স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এবারও নেওয়া হয়েছে যথাযথ পদক্ষেপ। ভোগান্তি দূর করতে উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ানওয়ে (একমুখী) চলাচল করবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে করে যানজট অনেকটা কমে যাবে।

সরজমিনে দেখা যায়, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত অতি দ্রুত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।

সেতু পূর্ব ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কেও রয়েছে একাধিক খানাখন্দ। ফলে ঢাকামুখী যান চলাচলে হতে পারে বিঘ্ন। এলেঙ্গা থেকে সেতুর দিকে মহাসড়কে চার লেন কাজে রয়েছে ধীরগতি।

উত্তবঙ্গগামী চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যেতে যানজট লাগে। গাড়ি ওভারটেকিং ও বিকল হওয়ার ফলে যানজট লেগে যায়।’

ট্রাক চালক রহিম মিয়া বলেন, ‘পুলিশের ভালো ডিউটির কারণে কয়েক বছর ধরে যানজট কম হয়।’

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের চার লেনের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড।

প্রকল্প সমন্বয়ক মিজান সরোয়ার বলেন, আমাদের প্রায় ৫ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬০০ কোটি টাকার কাজটি শুরু হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। সম্প্রতি করা সমীক্ষায় এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত মোট ৭৩টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৫৪টিই হয়েছে সেতুতে। আশা করছি, এবার ঈদে মহাসড়কে যানজট হবে না।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৯/২০ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ঈদে এর সংখ্যা আড়াই থেকে তিনগুণ বেড়ে যায়। গত বছর সর্বোচ্চ ৫৬ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছিল। যখন সেতুর ওপর গাড়ির চাপ পড়ে তখন টোল আদায়ে সমস্যা দেখা দেয়। সাময়িকভাবে টোল বন্ধ থাকে। এর জন্য যানজট কিছুটা হয়। এবার সেতুর দুই পাশে ৯টি করে ১৮টি এবং মোটরসাইকেলের জন্য ২টি করে ৪টি টোল বক্স বসানো হবে।

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে চার লেনের কাজে ধীরগতি চলছে। এর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে যানজট হবে না।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, ঈদে ঢাকামুখী যানবাহনগুলো ভূঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক সড়ক হয়ে চলাচল করে। এখানে খান-খন্দগুলো ঈদের আগেই মেরামত করা হবে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন একমুখী চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে; সে জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের মাঝে পানি, শুকনা খাবার সরবরাহের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সুপার বলেন, এবার ঈদে ৭০০ পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবেন। অনেক সময় ঈদের আগের দিন রাস্তা তুলনামূলকভাবে ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীরা ফাঁকা রাস্তায় বাড়িতে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারী বা মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে পারে। সেজন্য সব পুলিশ ঈদের সাত দিন আগে থেকে ঈদের পরের দুইদিন পর্যন্ত হাইওয়েতে দায়িত্ব পালন করবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, এ মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঊত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহগামী মানুষের ভোগান্তিমুক্ত ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, সাধারণ মানুষ এবারো নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ