অনৈতিক সুবিধা দিতে রাজি না হওয়ায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিমকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ইলিয়াছ আলী নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ ইলিয়াছ আলীকে জামালপুর জেলা জজ ও দায়রা আদালতের হাজির করলে সংশ্লিষ্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে তাকে আটক করে পুলিশ। ইলিয়াছ আলী বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক।
হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফিরোজ মিয়া, সাবেক সভাপতি আলী হাসান খোকা, দলিল লেখক শহিদুল্লাহসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সাব-রেজিস্ট্রার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে রেহেনা বেগম নামে এক নারী তার বোন রুবিনা বেগমের নামে হেবা দান দলিল করতে যান সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। তাদের পক্ষে শহিদুল্লাহ নামে এক দলিল লেখক সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট হেবা দান দলিলটি উপস্থাপন করেন। সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান মো. তামিম শুনানীকালে হেবাদান দলিল বাবদ কোনো টাকা পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে দাতা জমির টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এসময় সাব রেজিস্ট্রার দলিল লেখক শহিদুল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, হেবা দান করতেও যখন দাতা গ্রহিতার মধ্যে টাকা লেনদেন হয়েছে, সেকারণে এটা সাব কবলা করলে সরকার বড় ধরণের রাজস্ব পাবে। রাজস্ব আদায়ের কথা বলায় শহিদুল্লাহ সাবেক দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আলী হাসান খোকাকে এজলাসে ডেকে আনেন। তিনিও দলিলটি সম্পাদনটি করতে সাব রেজিস্ট্রারকে চাপ প্রয়োগ করেন। সাব রেজিস্ট্রার আবারও সরকারের রাজস্বের বিষয়টি বলায় ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন আলী হাসান খোকা।
এসময় তিনি বাইরে গিয়ে আরও ১৫-২০ জন দলিল লেখকে ডেকে সাব-রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় ঢুকে দলিল, অবিকল নকল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন এবং সাব-রেজিস্ট্রারকে খাস কামরায় অবরুদ্ধ করেন। খবর পেয়ে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ সাব-রেজিস্ট্রার তামিমকে উদ্ধার করেন।
সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মো. তামিম বলেন, আমি জানতে পারি, তিনটি বালামে কাঁটা ছেঁড়া ও ঘষামাজা করে জমির পরিমাণ জালিয়াতি করেছে ফিরোজ মিয়া নামে একজন দলিল লেখক। জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আমি অবস্থান নেওয়ায় দলিল লেখকরা আমার ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন দলিল লেখক আমার খাস কামরায় আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে নিরাপত্তার জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফিরোজ মিয়া বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম-দুনীর্তির প্রতিবাদ করায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি। সাব-রেজিস্ট্রার তামিমের অসদাচরণে আমরা অতিষ্ট।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার তামিমের দেওয়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার ৫ নম্বর আসামি দলিল লেখক ইলিয়াছ আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ