সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে প্রেমের সম্পর্ক করে আমেরিকা প্রবাসীর ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার নাম তাহেরা আক্তার (২৬)। তিনি সুনামগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উন্নত জীবনের আশায় ওই শিক্ষিকা আমেরিকান প্রবাসী নজরুল ইসলামের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে বিভিন্ন সময় এই প্রবাসীর কাছ থেকে ব্যাংক মারফৎ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ১৫-২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজ জায়গায় গড়ে তোলেন বাড়ি। একপর্যায়ে তাহেরা আমেরিকায় প্রবাসী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সেখানে যাওয়ার জন্য প্রবাসীর টাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে আইইএলটিএস সম্পন্ন করেন। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবি হয়ে ওই শিক্ষকা নিজের পেশাগত পরিচয় আড়াল করে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে একটি এবং সরকারি চাকুরীজীবি হিসেবে আরও একটি পাসপোর্ট করেছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রবাসী নজরুল ইসলাম বলেন,‘তাহেরা আমাকে বিয়ের করার কথা বলে মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করে। আমার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি তাকে ভালোবেসে সরল মনে দামি আইফোন, দামি জিনিসপত্র সহ আরও অনেক কিছু দিয়েছি। কিন্তু সে আমার সাথে সম্পর্ক থাকাকালে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে সে গোপনে বিয়ে করে নেয়। সে আমার কাছ থেকে তার বোনের সরকারি চাকরি বাবদ মোটা অংকের টাকা নেয়। তাছাড়া আমার টাকায় তার বাড়িতে ১৫-২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে। যার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে।’
তাহেরার স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতোপূর্বে আমেরিকায় বসবাসরত বাঙালি এক প্রবাসীর সাথে পরিচয় হয় তাহেরার। তারই সূত্রধরে ওই প্রবাসীর সাথে তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। যদিও ঘটনাক্রমে আমেরিকা প্রবাসী ওই যুবকের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি হয়। তাদের এ সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয় জনমনে ছড়িয়ে পড়তেই তাহেরার পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর থেকেই তাহেরা বিভিন্নভাবে ইউরোপ ও আমেরিকায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রাখে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাহেরার স্বপ্ন পশ্চিমা বিশ্বে বসবাস করা। এজন্য তিনি টাকাওয়ালা প্রবাসীদের সাথে সারাক্ষণ অনলাইনে কথা বলতেন। এমনকি তাদের সাথে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও শেয়ার করতে শুনাগেছে। তিনি সরকারি চাকুরিজীবি হিসেবে পরিচয় দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেখে মেশিন রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট করেন। যদি কারো মাধ্যম হয়ে সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কোঠায় যাওয়ার জন্য তিনি নিজেকে শিক্ষার্থী পরিচয়ে ডিজিটাল (ই) পাসপোর্ট করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা তাহেরা আক্তার জানান, এতো টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক নয়। নজরুলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্বীকার করে বলেন, ‘সম্পর্ক থাকা কালে আমি না চাইতেই হাত খরচ বাবদ টাকা পাঠাতো। আমি তার কথা মতো আইইএলটিএস করতে চেষ্টা করেছি। তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট করেছি।’
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান শেখ বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ভাবে তাহেরা সম্পর্কে কিছু অভিযোগ শুনেছি। তবে তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট করার বিষয়টি বেআইনি। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
তথ্য গোপন করে একাধিক পাসপোর্ট করার বিষয়ে জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সুনামগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের সরকারি নম্বরে কল করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ