ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মামলা করে উচ্ছেদ আতঙ্কে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার

প্রকাশনার সময়: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:১২

শেরপুরের শ্রীবরদীতে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে হামলা-লুটপাটের মামলা করে এখন এক খণ্ড জায়গা থেকে উচ্ছেদসহ হুমকি-ধামকি ও নানা প্রোপাগান্ডায় চরম আতঙ্কে রয়েছে সেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি।

উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের রাণীশিমুল বাজারে ওই ঘটনায় বয়োবৃদ্ধ আনছার আলী (৮০) ও তার পরিবারে বিরাজ করছে এমন অবস্থা।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সারেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও জেলা গোয়েন্দা শাখার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বললে উঠে আসে এমন তথ্য। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, নিরীহ পরিবারটি পাবে ন্যায় বিচার-এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

ভুক্তভোগী আনসার আলী বলেন, ‘দেড় মাস আগেও রাণীশিমুল বাজারে আমগোরে দোকান ছিল। পশুর খাদ্য বিক্রি করতাম। এখানকার সেকান্দর আলী গংরা দোকানের মালামালসহ দোকানঘর লুট কইরা নিয়া যায়। অহন ওগোরে ভয়ে পোলাপানরাও ঘরের বাইরে যাইতে পারে না। জমি জবরদখলের লাইগা নানা ধরনের হুমকি দিতাছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মেলাদিন আগে হিন্দুদের কাছ থেকে ২৮ শতাংশ জমি কিনছি। এইহানে মাছ চাষ করেছি। পুকুর পাড়ে দোকান দিয়া আমার পোলা পশুর খাদ্য বিক্রি করতো। এইডা দিয়া সংসার চলতো। গত ২৫ আগস্ট দোকানের মালামালসহ দোকানঘর লুট কইরা নিয়া যায়। এতে আমগোরে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি অইছে। আমগোরে কিনা জমি। এইহানের মসজিদের নাম কইরা ওরা ওই জমি দাবি কইরা মামলা করছিল। মামলাডা আদালতে আমগোর পক্ষে রায় দিছে। এরপরও তারা ওই রায় মানতে চায় না। আমরা অহন অসহায়। আমার দুইডা পোলা। এডা পোলা প্রতিবন্ধী। অহন আমরা আতঙ্কে আছি।’

ওইসময় তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। এইহান থাইক্যা উচ্ছেদ করার লাইগ্যা মেলা চক্রান্ত করতাছে।’

আনছার আলীর পুত্রবধূ শিউলি বেগম বলেন, ‘আমগোর জমিতে আমরা গাছ লাগাইছি। এইহানের ওরা জোরপূর্বক গাছগুলোও কাইট্টা নেয়ার হুমকি দিতাছে। আমরা ওগোর ভয়ে কিছুই কইতে পারছি না।’ আনছার আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সেকান্দর আলী, আসাদুজ্জামান, সামছুদ্দিন মিয়া, উজ্জল মিয়া, মঞ্জুরুল হকসহ আরও ৪/৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে দোকান ঘরসহ মালামাল লুটপাট করে। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এখন ক্লাবের নাম দিয়ে আমাদের ক্রয় করা জমি দখলের পায়তারা করছে। ওই বিষয়ে আমি শেরপুরের শ্রীবরদী সিআর আমলী আদালতে গত ৬ সেপ্টেম্বর সেকান্দর আলী (৫৫), আসাদুজ্জামান ছানা (৪৮), শামছুদ্দিন মিয়া (৫০), উজ্জল মিয়া (৩৫), আইয়ুব আলী (৪৮), মঞ্জুরুল হক (৩০) ও আব্দুল বেপার (৩৮)সহ ৭ জনকে স্বনামে এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। মামলাটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, রানীশিমুল বাজার সংলগ্ন ২৮ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকজনের সাথে আনছার আলীর বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে আদালতে মামলা হলে ওই জমির ক্রেতা আনছার আলীর পক্ষে রায় দেয় আদালত। এরপর ওই চক্রটি ক্ষিপ্ত হয়ে আনছার আলীর ছেলের পশু খাদ্যের দোকানে হামলা করে মালামাল লুটপাট ও দোকানঘর ভাঙচুর করে নিয়ে যায়। এমনকি একটি ক্লাবের নাম দিয়ে স্থানীয় সিএনজি চালক উজ্জলসহ কয়েকজন জমি দখলের লক্ষ্যে জমির পাশে একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানার টাঙিয়ে জমি জবর দখলের পায়তারা করছে। এখন তাদের সবকিছুই লুট করে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে।

তবে আসাদুজ্জামান দোকান লুটপাটের ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করে বলেন, আমি মসজিদ কমিটির লোকের অনুরোধে এখানে এসে ছিলাম। তবে মসজিদ কমিটি ওই মামলার আপিল করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ওই চক্রটি জোরপূর্বক দোকান লুটপাট করেছে। এখন জমি জবর দখলের পায়তারা করছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদেরকে মামলা হামলার হুমকি দেয়। এজন্য তাদের বিরদ্ধে কেউ কথা বলতে চান না।

রানীশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তবে কোনো সুরাহা হয়নি।

রানীশিমুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা খালেদ হাসান বলেন, ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে। মামলায় যে ডিগ্রি পাবে সে হবে জমির মালিক। তবে লুটপাটের ঘটনা আমরা জানি না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ওই ঘটনায় আদালতে দায়ের করা নালিশী মামলার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ