শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাদরাসা পরিচালনার কমিটির সভাপতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ফারিরবিল মিনহাজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ্ আলিম মাদরাসা গভার্নিং বডির সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ মনজুর এমন প্রতারাণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করে কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ মাদরাসা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-রেজিষ্ট্রার (প্রশাসন) মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষাবোর্ডে দাখিলকৃত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সুপারিশ কপি পুনরায় যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলাপ করে প্রস্তাবিত সভাপতি মনোনয়নের কপি জাল জালিয়াতি করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। ফলে অনুমোদিত কমিটির সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাদরাসা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড (গভার্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫(৩) দাখিলকৃত কাগজপত্র জাল প্রমাণিত হওয়ায় পত্র জারির পর থেকে অনুমোদিত গভার্নিং বডির স্মারক স্থগিত করে যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ফারিরবিল মিনহাজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ্ আলিম মাদরাসা গভার্নিংবডির কমিটির মেয়াদ আগামী ৪ এপ্রিল শেষ হবে। এর মধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনও শেষ হয়েছে। মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল বশর নতুন কমিটির সভাপতি ঘোষণা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ মাদরাসা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গত ৩ মার্চ একটি পত্র পাঠান।
এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলামের নাম এক নম্বরে রেখে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদকে দ্বিতীয় এবং আনোয়ার হোসেন জাবুকে শেষে রাখা হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ নুরুল বশর মাদরাসার প্যাডে ১২ বছর ধরে সভাপতির দায়ীত্বে থাকা এমএ মনজুরকে এক নম্বরে রেখে আরও একটি পত্র পাঠান। অধ্যক্ষের পাঠানো ওই পত্রে এমএ মনজুর শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর অজ্ঞাতসারে তাদের স্বাক্ষর ও সীলমোহর জাল করে এবং ভুয়া স্মারক নম্বর ব্যবহার করেন। দুজন হাইপ্রোফাইল দায়িত্বশীল ব্যক্তির সুপারিশ সম্বলিত পাঠানো পত্রের আলোকে গত ২১ মার্চ এমএ মনজুরকে সভাপতি করে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দেন শিক্ষা বোর্ড। বিষয়টি সন্দেহ হলে শিক্ষা বোর্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অপর সভাপতি প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম।
সভাপতি প্রার্থী ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলাম বলেন, আমাকে সভাপতি করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহিনা আক্তার একটি ডিও লেটার দেন। এছাড়াও সবার সম্মতিক্রমে পাঠানো কমিটিতে আমার নাম এক নম্বরে রয়েছে। যেখানে মনজুরের নামই ছিল না; সেখানে তিনি কিভাবে সভাপতি হলেন? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে শিক্ষাবোর্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই। পরে তারা যাচাই-বাছাই করে প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি চিহ্নিত হয়।
তিনি আরও বলেন, মনজুর ১২ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে থাকার সুবাদে অধ্যক্ষ আর তার মধ্যে অপকর্মের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। নতুন কেউ সভাপতি হয়ে আসলে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার ভয়ে দুজনেই মিলে এইসব নোংরামির জন্ম দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়দের দাবি, অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ফারিরবিল মিনহাজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ্ আলিম মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম। কয়েক বছর ধরে সভাপতি-অধ্যক্ষ মিলে বহুমূখী অপকর্মের পসরা সাজিয়েছে। বাসা বেঁধেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির। এই দুজনের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কয়েক বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এমএ মনজুর বলেন, কারো স্বাক্ষর জালিয়াতি করিনি। যথাযত নিয়ম মেনে তাদের সুপারিশ নেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে এইসব আলী আহমদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল বশরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে হাসপাতালে শয্যাশায়ী দাবি করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন রিসিভ করেন জাফর ইকবাল নামের এক ব্যক্তি।
তিনি নিজেকে বোর্ড চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে বলেন, বিষয়টি একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ঘৃণিত অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, দুজন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির স্বাক্ষর জালিয়াতি করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে ওই স্মারকটি স্থগিত করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস হতে দেবো না। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। এরপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ