মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সুপার বোর্ড নামের টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন একটি বোর্ড তৈরির কারখানায় মজুত করে রাখা পাটখড়ির গুদামে লাগা আগুন প্রায় ২১ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে আগুন পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এখন গুদামের ভস্মীভূত মালামাল সরানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে সংবাদ সংগ্রহে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই কারখানায় এর আগেও একবার আগুন লাগে, আবারো লাগলো। বিষয়টি রহস্যজনক বলে মন্তব্য গজারিয়া উপজেলাবাসীর।
এর আগে রোববার দুপুর ১টার দিকে হোসেন্দী ইউনিয়নের সিকিরগাঁও এলাকায় অবস্থিত টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন সুপার বোর্ড কারখানার ওই গুদাম ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
এদিকে, সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর শুনে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা। এ সময় ওই কারখানার নিরাপত্তা কর্মীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও নিরাপত্তা কর্মীরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি।
সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, ভস্মীভূত বর্জ্য মেঘনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। সাংবাদিকরা যদি সেই ছবি তোলে, সেই কারণে তারা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল থেকে কারখানার ওই গুদামে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। বেলা ১টার দিকে গুদামে মজুত করা পাটখড়িতে আগুন ধরে গেলে শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজন মিলে তা নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে বাতাসের কারণে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তারা ব্যর্থ হন। গুদামের পাশেই নদীতে পাটখড়ি বোঝাই তিনটি ট্রলার ছিল। গুদামের আগুনের ফুলকি বাতাসের মাধ্যমে ওই ট্রলারগুলোতে পড়লে মালামালসহ ট্রলারও পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। প্রথমদিকে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, এরপর নারায়ণগঞ্জের আরও চারটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। আগুনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় কুমিল্লা, ঢাকা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের আরও কয়েকটি দল আসে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
টি কে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতাহার তাসলিম জানান, কারখানাটিতে ঠিক কি পরিমাণ মালামাল আছে, সেটি তদন্তের পর জানা যাবে। তবে আগুন লাগার এ ঘটনায় বিপুল পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এর আগে ২০১৩ সালেও আগুন লাগে সুপার বোর্ডের এ কারখানায়।
অগ্নিকাণ্ডের স্থান পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর আক্তার মোবাইলে জানান, রোববার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এসে আগুন নেভাতে টানা কাজ শুরু করে। দৃশ্যমান আগুন নিভে গেছে। তবে গুদামের মজুদ করা পাঠখড়ি ও প্লাই বোর্ডে আগুনের ফুলকি রয়েছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট কাজ করেছে। পাঠখড়ি ও প্লাইবোর্ডের স্তরে স্তরে ফুলকি আছে। পানি ছিটিয়ে একটি একটি করে স্তরে আগুন নির্বাপন করে মালামাল সরানো হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি এখনো নির্ণয় করা যায়নি।
এদিকে এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এ কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলম বলেন, ইউএনও, গজারিয়া থানার ওসি, ফায়ার সার্ভিসের একজন এই কমিটিতে রয়েছেন। কেন, কিভাবে আগুন লাগলো বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ