ফোনের ওপার থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভেসে আসছে, ‘আব্বা কবে টাকা দিবা, ওরা আমাকে খেতে দিচ্ছে না।’ এপাশ থেকে আরেকজন বলছেন, ‘ভাই ওরে মাইরেন না। আমি যেভাবেই পারি টাকা দিবো, কিডনি বেইচ্যা হইলেও টাকা দিব।’ ফোনের ওপাশ থেকে আবার সন্তান বলছে, ‘আব্বা টাকা দিতেই হবে, নাহলে ওরা আমাকে মাইরা ফেলবে।’
জানা যায়, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া একই গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী মুকুল ঠাকুর নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরে তার পরিবার জমি বিক্রিসহ ঋণ নিয়ে মুকুলকে ১২ লাখ টাকা দেন। এরপর শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমান মুকুল।
এরপর থেকেই গত ১২ দিন যাবৎ দু-একদিন পরপর এভাবে ইমো নম্বরে কল দিয়ে কৃষক টিটুল মিয়ার কাছে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবি করছে প্রতারক চক্র।
এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় কৃষক টিটুল মিয়া। তাকে জানানো হচ্ছে, তার ছেলে লিবিয়ায় রয়েছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। টাকা না দিলে একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ভুক্তভোগী ওই পরিবারটি।
শাকিলের বড় বোন বৃষ্টি আক্তার জানান, গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে শাকিলকে ভারতে নেওয়া হয়। পরে দুবাই হয়ে ১৪ জানুয়ারি লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে একটি ক্যাম্পে রাখা হয় বলে জানানো হয়। কয়েকদিন স্বাভাবিক কথাবার্তাও হয়েছে। কিন্তু গত ১২ দিন যাবৎ অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ রেখেছে চক্রটি। নির্যাতনের সময় কল দিয়ে শোনানো হচ্ছে বাড়িতে। নির্যাতনকারীরা বাংলায় কথা বলছেন। এখন তার মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছে চক্রটি।
ভুক্তভোগী শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি এতো টাকা কই পাবো! যা ছিল শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করেই তো পাচারকারী মুকুলের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন আমি কই যাবো!’এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এখন তাকে উদ্ধারের জন্য পরিবার যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে। ঢাকায় অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে।’
‘ওই পরিবার যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুকুল ঠাকুরের নামে মানবপাচারের কোনো মামলা আছে কি-না, আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’
নয়াশতাব্দী/এমএইচ/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ