নাটোরের ‘গুরুদাসপুর থানা শিক্ষাসংঘ পাবলিক লাইব্রেরিটি’ সত্তর বছরের পুরনো প্রাচীন গ্রন্থগার। বর্তমানে অযত্নে অবহেলায় লাইব্রেরিটি বন্ধের পথে। লাইব্রেরির অবকাঠামোগুলো ধসে পড়ছে। দুইটি সেলফে কিছু বই থাকলেও এখন আর নেই পাঠক। এক সময় পাঠকের উপস্থিতিতে জায়গা হতো না লাইব্রেরিতে। পাঠকের অনুপস্থিতিতে বন্ধ লাইব্রেরিটি। একই সাথে দেখভাল, আর্থিকসংকট ও পৃষ্টপোষকতার অভাবে বন্ধ হয়েছে লাইব্রেরির সকল কার্যক্রম।
লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, চলনবিলের কৃতি সন্তান অধ্যাপক এম এ হামিদ খানের প্রচেষ্টায় ১৯৫৪ সালে গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে গ্রন্থগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এসময় তাকে সহযোগিতা করেন বিদ্যাৎসাহী ব্যক্তিবর্গ। থানার সাথে মিল রেখে গ্রন্থগারটির নাম রাখা হয় ‘‘ গুরুদাসপুর থানা শিক্ষাসংঘ পাবলিক লাইব্রেরি’’। এমনকি লাইব্রেরিটি পূর্ব পাকিস্তান আমলে সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত হয়। এরপর ১৯৭২ সালে আবারও রাজশাহীর সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রহন্থগারে তালিকাতেও নেই এই প্রাচীনতম ‘‘গুরুদাসপুর থানা শিক্ষাসংঘ পাবলিক লাইব্রেরিটির’’ নাম।
লাইব্রেরির ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় ছেফাতুল্লাহ তালুকদার দেড় বিঘা জমি দান করেন। লাইব্রেরির সদস্য ও এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় দেড় বিঘা জমির উপর একতলা বিশিষ্ট্র ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে ভবনের কাজ শেষ হলে লাইব্রেরিটি পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। লাইব্রেরিতে সংগ্রহে রাখা হয় রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র বই, তৎকালীন ইতিহাস সম্পর্কীত বই, বিজ্ঞানসম্মত বই, কাজী নজরুল সংগ্রহ, রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহ, আমেরিকান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস, নাট্যবলীসহ তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন মনীষীদের লেখা বইগুলো। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর সংগ্রহ করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বই। তবে যুদ্ধের সময় লাইব্রেরি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বই হারিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- শিক্ষাসংঘ লাইব্রেরিটির ভেতরে ময়লার স্তুপ পরে আছে। সেলফগুলোর মধ্যে বইগুলো জ¦রাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ছয়টি সেলফের দুইটিতে নেই বই। বাকী চারটিতে বই থাকলেও রয়েছে ধূলা-ময়লার স্তর। তবে একজন কেয়ারটেকার কর্মরত থাকলেও অবহেলার কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নেই লাইব্রেরিতে।
লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাসান জানান, ১১ সদস্য বিশিষ্ট্র লাইব্রেরিটিতে আমি ২০২২ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করি। নিজ খরচে লাইব্রেরিটি খোলার পরিবেশ করেছি। শিক্ষাসংঘের জায়গায় নির্মাণ করা ৫টি রুমের যে ভাড়া পাওয়া যায় বর্তমানে সেই টাকা দিয়ে চলছে শিক্ষাসংঘ। লাইব্রেরি সেকশন বন্ধ রয়েছ। বর্তমানে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত্রি ১০টার পর্যন্ত খোলা হয়। এসময় ক্যারাম, দাবা খেলা আর টেলিভিশন দেখে সময় পার করা হয়।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঞাঁ বলেন, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে গুরুদাসপুরে যে প্রাচীনতম শিক্ষাসংঘ পাবলিক লাইব্রেরি রয়েছে তা জানা ছিলো না। বিস্তারিত তথ্য জেনে লাইব্রেরিটি রক্ষার্থে ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ