‘আমি এবং আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’ এমনটি লেখা পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, উপজেলায় ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলোমান দায়িত্বে আছে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিনজন। ক্লাস্টার ভাগ করে বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময় উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আছে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ। এই ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত আছেন শিক্ষক প্রতিনিধিগণ। সম্প্রতি সহকারী শিক্ষিকা মোসা. সাবিকুরন্নাহার ৭১ নম্বর পূর্ব আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটি নিয়ে প্রতি মাসে নিয়মিত হাজিরা, বেতন উত্তোলন, মাসিক রিটাংয়ে স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন তার বিনিময়ে দিতে হয় ঘুষ।
উপজেলার ৮৯ নম্বর আদমপুর বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের সহকারী শিক্ষিকা তামান্না জাহান, ১৪৪ নম্বর রচহাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিন্নাত হোসেন, ১০৫ নম্বর মীরমদন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বিবি হাজরা, ১৪০ নম্বর উত্তর চরহাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সাইফুলসহ অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে মেডিকেল ছুটি নিয়ে নিয়মিত হাজিরা, বেতন উত্তোলন, মাসিক রিটাংয়ে স্বাক্ষর ও জমা দিয়ে থাকেন। তামান্না বেগম পাচঁমাসের বেতন উত্তোলন করেন তার সিংহভাগ শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহু শিক্ষক দাবি করেন., শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলে সবই সম্ভব। তারা আরও বলেন, একজন শিক্ষক-শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটি নিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বেতন উত্তোলন, মাসিক রিটাংয়ে হাজিরা থাকে কি করে? এগুলো সবই হয় টাকার বিনিময়ে। শিক্ষা কর্মকর্তা এ সকল কাজ করে থাকেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ছাড়া বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মৌখিক আদেশের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ছুটি দেন এবং এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ক্লাশ করার অনুমতি দিয়ে থাকেন।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে ৭১ নম্বর পূর্ব আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিকুরন্নাহার বেগমকে ঘুষ দিয়ে ছুটি নেয়ার বিষয় জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি। অন্যন্য শিক্ষক-শিক্ষাকগণ প্রাথমিকভাবে ফোন রিসিভ করে পরিচয় পাওয়ার পর আর কথা বলেননি।
সরেজমিনে কয়েকদিন ধরে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পাওয়া যায়নি। প্রধান দের কাছে তথ্য চাইলে বলেন, আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। শিক্ষা অফিসার স্যার জানেন, তিনিই বলতে পারবেন।
পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান জানান, দশমিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ বা কোনো দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান এর ঘুষ নেয়ার বিষয় ফোনে কথা বলতে রাজি নন, তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে বিষয়টি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ