ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জীবিত হয়েও ১৪ বছর ধরে মৃত!

প্রকাশনার সময়: ২১ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪১
৯২ বছরের দানেছ আলী ও তার অভিযুক্ত পুত্র সাইফুল ইসলাম (ডানে)। -নয়া শতাব্দী

দানেছ আলী এখনও বেঁচে আছেন, তার বয়স ৯২ বছর। কিন্তু কাগজে-কলমে তিনি মৃত। দানেছ আলীকে মৃত দেখিয়ে ৫ বছর আগে ভোটার তালিকা থেকে তার নাম কাটা হয়। শুধু যে নাম কাটা হয়েছে তা নয়, তাঁর নামে কোনো সম্পত্তিও নেই।

অভিনব এই প্রতারণার ঘটেছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ইন্দারজানী ইন্নছনগর গ্রামে।

অভিযোগ উঠেছে, দানেছ আলীর একমাত্র ছেলে সাইফুল ইসলাম তার বোনদের বঞ্চিত করে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিতে বাবাকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেন। চার বোন মিলে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগও করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের নথিতে দেখা যায়, দানেছ আলীকে ২০১০ সালে মৃত দেখিয়ে ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটার আবেদন করেন তার ছেলে সাইফুল। নথিতে সাইফুলের নাম থাকলেও, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভুল সংশোধন করা হবে।

লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইফুল ছাড়া দানেছ আলীর আর কোনো ছেলে নেই। সাতটি মেয়ে।

নির্বাচন কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দানেছ আলীর মৃত্যু হয়। কাগজে-কলমে মৃত হওয়ায় দানেছ আলীর সমস্ত জমি বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) রেকর্ডে একমাত্র ছেলে সাইফুলের নামে।

এদিকে ২০১১ সালে ৪৯ শতাংশ জমি বিক্রি করেন দানেছ আলী। রোববার (১৭ মার্চ) ওই জমি খারিজ করতে গেলে ভূমি কার্যালয় থেকে জানানো হয়, দানেছ আলী মারা গেছেন ২০১০ সালে, সব সম্পত্তি সাইফুলের নামে। উল্টো জমির ক্রেতারা প্রশ্নের সম্মুখীন- মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে কীভাবে জমি কিনলেন?

বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং পরদিন (১৮ মার্চ) দানেছ আলীর মেয়েরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটার তালিকা থেকে বাবার নাম কর্তনের বিষয়টি আমি জানি না। কেউ হয়তো শত্রুতাবশত আমার নাম ব্যবহার করে আবেদন করেছেন। আমার বাবা এখনো জীবিত।

নতুন রেকর্ডে বাবার জমি কীভাবে আপনার নামে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল বলেন, ভুলবশত আমার নাম উঠে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

জীবিত ব্যক্তি কীভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেলো- এ নিয়ে কথা হয় ভোটার হালনাগাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্দারজানী গ্রামের হাজী আজহার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিউটি আক্তারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে তথ্য সংগ্রহের সময় দানেছ আলীর ছেলে সাইফুল আমাকে তার বাবার মৃত্যুসনদ দেখান। সাইফুল নিজেই আমাকে বলেন তার বাবা ২০১০ সালে মারা গেছেন। ছেলের দেওয়া তথ্য ও মৃত্যুসনদ অনুযায়ী আমি নির্বাচন অফিসে তথ্য জমা দিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। নিজের ছেলে যদি মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজ দেখায়, তাহলে আমার কি করার আছে?

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের তালিকায় দানেছ আলী মৃত। এরপরও বিষয়টি নিয়ে যেহেতু কথা উঠেছে, তাই আবেদন প্রক্রিয়াটি যথাযথ নিয়ম মেনে হয়েছিল কিনা, বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, অভিযোগপত্রটি এখনো হাতে পাইনি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ