ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার এক যুবক আহসান হাবীব (৩৫)। জন্ম থেকেই তিনি বিকলাঙ্গ (প্রতিবন্ধী)। জীবনসযুদ্ধে হার না মেনে এই যুবক তার দুই হাত ও পায়ের হাঁটুর উপর ভর দিয়ে চলাচল করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী আহসান হাবীব বলেন, ‘চেষ্টা করি ব্যবসা করে চলতে। ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবসায় রানিং। আমি কারো কাছে কখনও সাহায্য চাইনি। এই ব্যবসা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভই প্রায়, তবু কষ্ট করে চলি। দৈনিক যা কামাই তাই দিয়ে সংসার চালাই। আগের তুলনায় বিক্রি কমে গেছে। এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার করণে আমার চলা-ফেরায় অনেক সমস্যা হয়। সরকারিভাবে একটি হুইল চেয়ার ও আর্থিক ঋণ সহযোগিতা পেলে ব্যবসা করে ভালভাবে চলতে পারতাম।
তিনি উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মমতাজ উদ্দিনের হাত ধরে বাবার পেশার সাথে তাল মিলিয়ে দিয়েছেন ওষুধের দোকান। স্থানীয় আদর্শ বাজারে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে চলছে তার ছোট্ট ওষুধের দোকানটি। দোকান থেকে নিজ বাড়ির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। তাই আসা-যাওয়ার কষ্টের কথা চিন্তা করে দোকানের কাছাকাছি থাকার জন্য ভাড়া নিয়েছেন আরও একটি জরাজীর্ণ ঘর। সেখানেই রাত্রি যাপন করেন তিনি। মাস দেড়েক পরপর যান নিজ বাড়িতে। এ যেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক বীরের গল্প।
দুই হাত এবং দুই পা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেওয়া আহসান হাবীব ৩৫ বছর বয়সে একবারও দাঁড়াতে পারেননি দুই পায়ে। দুই হাতের তালু এবং দুই পায়ের হাঁটুতে ভর দিয়েই চলাচল করতে হয় তাকে। তিনি শারীরিক এই বাধা উপেক্ষা করে ২০ বছর আগেই নেমেছেন জীবনযুদ্ধে। পল্লী চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও কারও কাছে হাত বাড়াননি তিনি। কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার প্রত্যয়ে বেছে নেন কর্ম। অন্যের উপর বোঝা নয়, নিজ কর্মে আয় উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চান আহসান হাবীব।
সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেওয়া আহসান হাবীব ছোটকাল থেকেই ছিলেন মেধাবী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও অভাব অনটনের কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া হয়নি তার। সংসারের হাল ধরতে ২০০৪ সাল থেকে রামপুর ইউনিয়নের কাকচর আদর্শ বাজারে স্বল্প পুঁজিতে ওষুধের দোকান নিয়ে বসেন তিনি। পুঁজির অভাবে দোকানে ওষুধের ঘাটতি থাকায় ব্যবসায় লেগে থাকে মন্দা। তার ১০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মাসুম মিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করে।
আদর্শ বাজারের প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তার ব্যবসায় ক্যাশ বেশি না, খুবই কম। টেনে-টুনে চলতে হয়। কিন্তু সে সৎ লোক, কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে রাজি না। এত কষ্টের মাঝেও সে ক্ষুদ্র ব্যবসা দিয়ে চলে।
স্থানীয় খলিলুর রাহমান বলেন, তিনি কারও কাছে কখনো হাত পাতে না। কর্ম করে কষ্ট করে চলে। কিছুদিন পূর্বে তার হাটুর টিউমার অপরেশন হয়েছে। সে সময় তিনি চিকিৎসার জন্য টাকা পঁয়সাও ধার দেনা করে সংগ্রহ করেছে। চলাচলের জন্য একটি হুইল চেয়ার হলে তার জন্য ভাল হতো।
আহসান হাবীবের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেটা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। আসতে যাইতে অসুবিধা হওয়ায় বাজারেই থাকে। আমিও তাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারি না। সে যদি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় তার জন্য ভাল হয়।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আপেল মাহমুদ বলেন, ওনাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া আছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের যে সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মতো আছে, সেগুলো দেওয়ার চেষ্টা করবো। বিশেষ করে সমাজ সেবা অফিসে থেকে যদি একটি হুইল চেয়ার দেওয়া হয় তাহলে তার চলার জন্য সুবিধা হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ