লালমনিরহটের চাপারহাটে সবজির বাজারে ধস নেমেছে। হাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সবখানেই সবজিতে ভরপুর। সাত সকালে খেত থেকে সবজি তুলে হাটে আনেন চাষিরা। ক্রেতা-বিক্রেতা আর আড়ৎদারদের ভিড় ছিল নিত্যদিনের মতো। কিন্তু ছিল না সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম। ঢাকায় নিত্যপণ্যের যখন অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে দিশাহারা ক্রেতা-ভোক্তা, সেই সময় সবজির বাজারে ধস নেমেছে উত্তরের জেলা লালমনিহাটে। ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বস্তি মিললেও দিশাহারা কৃষক। সার তেল কীটনাশক বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ।
মৌসুমের শুরুতে তাদের উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পেলেও ভরা রমজান মাসে তাদের আশা ছিল অনেক বেশি দাম পাবেন তারা। কিন্তু রমজানের সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই ধস নেমেছে সবজির বাজারে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য পরিবহন খরচই উঠছে না।
কয়েকদিন আগেও লালমনিরহাট সবজির বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে, মুলা ৩ থেকে ৭ টাকা, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, করলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, লালশাক এক টাকা আটি, ধনেপাতা ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে নেমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা মরিচ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।এমন বাজার পরিস্থিতিতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসে থাকা এক ছাত্র জানান, আমরা রীতিমতো সবজি খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম অনেক বেশি দামের কারণে। এ রকম দাম পেলে আমাদের সবজির ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারব।
এক রিকশাচালক রফিকুল জানান, সারা দিনে যা উপার্জন করি, তা চাল-ডাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সবজির দাম কম হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি। ক্রেতা-ভোক্তারা সন্তুষ্ট হলেও দিশাহারা হয়েছে কৃষকরা।
আদিতমারী থেকে আসা এক কৃষক জানান, আমাদের উৎপাদিত শাকসবজি আমরা কুমারীহাট বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে সবজির দাম কমে গেছে তাতে আমাদের পরিবহন খরচ নিজের পকেট থেকেই দিতে হবে। সরকার একটা ব্যবস্থা না নিলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। তেল সার কীটনাশক বীজের আকাশ ছোয়া দামের কারণে সবজি উৎপাদনে খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি হয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে পথে বসতে হবে কৃষকদের। শুধু কৃষকরাই ধাক্কা খায়নি। সেই সঙ্গে খুচরা বিক্রেতারাও ধাক্কা খেয়েছে অনেক বড়।
পণ্যের দাম বেশি থাকলে তাদের লাভও বেশি হত বলে জানান আরিফুল ইসলাম নামের এক খুচরা বিক্রেতা। তিনি জানান, আগে এক কেজি পণ্য বিক্রি করলে ১০ থেকে ১৩ টাকা লাভ হতো। সেখানে সবজির প্রতি কেজি যদি দুই থেকে পাঁচ টাকা হয় তাহলে লাভ কীভাবে হবে। এমন অবস্থায় ক্রেতারাও যাতে সহনীয় দামে পণ্য কিনতে পারেন এবং কৃষক ও খুচরা বিক্রেতারাও স্বাভাবিক দাম রেখে তাদের পণ্য কেনাবেচা করতে পারেন এমনটাই প্রত্যাশা লালমনিরহাট বাসীর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে বাজারে ব্যাপক পরিমাণ সবজি আমদানি হওয়ায় কিছুটা দাম কম তবে এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আবারো দাম বাড়বে বলে আশা আশা করা যায়।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ