ঢাকা, রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১১ রজব ১৪৪৬

যত্রতত্র পুকুর খননে জলাবদ্ধতায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমি 

প্রকাশনার সময়: ২০ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৩

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে যত্রতত্র পুকুর খননে প্রায় ৬ বছর যাবত জলাবদ্ধতায় তিন ফসলি জমিগুলো বছরে সাত আট মাস পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে ওই ফসলি মাঠে ধান ও সরিষার আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।

এ দিকে শুধুমাত্র বোরো মৌসুমে একটি ফসলের আবাদ হয়। তাও পানি নামতে দেরি হওয়ায় নাবী আবাদের হওয়ায় ফলনও ভাল হয় না। আর বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে এ এলাকার সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্ট ভয়াবহ জলাবদ্ধতার নিরসন না হলে কৃষক পরিবারগুলোতে ভাত জুটবে না এমনটি জানান, তাড়াশ সদর ইউনিয়ন এলাকার মাধবপুর গ্রামের কৃষক মো. গোলাম রাব্বানী (৬২)।

সরেজমিনে ওই এলাকায় দেখা গেছে, যেখানে কার্তিক মাসে এ এলাকার জমিতে পানি থাকে না। সেখানে মধ্য চৈত্র মাসেও শত শত বিঘা জমিতে পানি আটকে আছে। আগাছায় ভরে আছে ফসলি মাঠ। কোনো ফসলের আবাদ চোখে পড়ে না। কিছু কৃষক বোরো আবাদের জন্য জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। তাদেরই একজন কৃষক মহের উদ্দিন জানান, তার দুই বিঘা জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতেই ৪ হাজার টাকা কৃষি শ্রমিককে দিতে হবে। আর এ অবস্থা শুধু তার না এ এলাকার সকল কৃষককের। জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি জমিগুলো এখন আগাছার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদি মাগুড়া গ্রামের কৃষক মাজাহারুল ইসলাম।

অবশ্য, একই গ্রামের কৃষক মো. মুনসুর আলী বলেন, এক দশক পূর্বেও এ সকল জমিতে সরিষার আবাদ তুলে আলুর আবাদ করতাম। আবার আলু তুলে ধানের চাষ। এভাবে পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে তিনটি আবাদ হতো। কিন্তু সর্বনাশা পুকুর খননের কারণে এখন ফসলি জমিগুলো খণ্ড খণ্ড বিলে রূপ নিয়েছে। যেখানে পানি নামার পথ নেই। তাই একটির বেশি আবাদও হচ্ছে না। আর এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলেরর কৃষকদের আর্থিক মেরুদণ্ড বলতে কিছু থাকবে না।

অপর দিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব তাড়াশের মাধবপুর, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া, শ্রীকৃষ্ণপুর, সান্তানসহ পাঁচ-ছয়টি গ্রামের আশপাশের এ জমিগুলোর মাটি ছিল খুব উর্বর। এজন্য এ সকল জমিতে সরিষা, গম, আলু, ধান, পাটসহ বছরে তিন থেকে চারটি ফসল ঘরে তুলতেন এ এলাকার শত শত কৃষক। এতে তাদের সংসারে অনন্ত ডাল ভাতের অভাব ছিল না। অথচ অতি উর্বর এ সকল ফসলি জমিতে ধানের চেয়ে মাছ চাষে অধিক লাভ হয় এ ধরনের লোভে প্রায় আট দশ বছর পূর্বে কিছু কৃষক অবৈধভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এ অঞ্চলে পুকুর খনন শুরু করেন। আর এরই মধ্যে এ পাঁচ-ছয়টি গ্রাম এলাকায় তিন ফসলি জমিতে খনন করা পুকুরের সংখ্যা প্রায় ২শ ছাড়িয়ে গেছে। এতে আবাদি জমি কমার সাথে সাথে খাদ্য শস্যের উৎপাদনও কমছে।

পাশাপাশি বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে এ এলাকার কমপক্ষে পানি প্রবাহের জন্য সরকারি অর্থায়নে করা ১০ থেকে ১২ টি ব্রীজ কালর্ভাটের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ফসলি জমির পানি বের হতে না পেরে স্থায়ীভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। যার মাশুল দিচ্ছেন এ অঞ্চলের নিরীহ খেটে খাওয়া কৃষকরা।

জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা নিয়ে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. আকতার হোসেন বলেন, তাড়াশ সদর ইউনিয়নের এ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে মানববন্ধন, কৃষক সমাবেশ সবই হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিএডিসি খাল খননের উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু কেউ খাল খননের জমি দিতে চায় না। তারপরও আমি এ অঞ্চলের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পুকুর খনন বন্ধ না করলে ওই এলাকায় কিছুই করা সম্ভব না। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরাও চেষ্টা করেছি। কিন্তু খনন করা পুকুরগুলোর পাড় কাটতে রাজি নন কেউ। জমির পানি বের হতে না পেরে স্থায়ীভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। যার মাশুল দিচ্ছেন এ অঞ্চলের নিরীহ খেটে খাওয়া কৃষকরা।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ