বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১

ধারের টাকার জন্যই খুন হন বিকাশ ব্যবসায়ী, আটক ১

প্রকাশনার সময়: ২০ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৩

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের নিখোঁজ বিকাশ ব্যবসায়ী আউয়ালের (২২) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। অনলাইন জুয়ার পাওনা টাকা যাতে না দিতে হয়, সে কারণেই বিকাশ ব্যবসায়ী আউয়াল ইসলাম শুভকে হত্যা করা হয়।

আব্দুল আউয়াল সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বর্মতত গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে। তিনি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন।

বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার কামাল হোসেন বলেন, আউয়াল ইসলাম শুভ বিকাশ ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি বিভিন্ন লোকের সঙ্গে বিকাশে লেনদেন করতেন। সেই সাথে তিনি অনলাইন জুয়ারিদের টাকাও লেনদেন করতেন। গ্রেপ্তার আসামি শ্রী নীল বাবু চন্দ্র দাস (২৩) একজন অনলাইন জুয়ারি ও মাছ ব্যবসায়ী। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঘটনার আগেরদিন ১৩ মার্চ বুধবার এই নীল বাবু চন্দ্র, তার বন্ধু ইসমাইলসহ কয়েকজন শ্রীপুর ইউনিয়নের ছাপড়হাটি গ্রামের ব্যাপারী পাড়ার মোড়ে লিটনের দোকানে চা খেতে যান। সেখানে তারা প্রতি গেম ১০০ টাকা করে মোবাইলে লুডু বাজি খেলতে থাকেন। এক পর্যায়ে একজনের মোবাইলের চার্জ শেষ হলে ইফতারের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চলে যান। এসময় আউয়াল তার বাড়ি থেকে একটি অটোরিকশায় লিটনের চায়ের দোকানে আসছিলেন।

এসময় আসামিরাও পুনরায় ওই অটোরিকশায় করে সেখানে আসেন এবং ওই চায়ের দোকানে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি দেখতে থাকে। এসময় আউয়াল সেখানে থেকে মাঠেরহাটে তার দোকানে চলে যায়। এরপর রাত অনুমান ১০টার দিকে আউয়াল মাঠেরহাট থেকে আসার সময় ইসমাইল তাকে রাস্তায় কথা আছে বলে দাঁড়াতে বলে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসমাইল, নীল বাবু চন্দ্র আউয়ালকে পাওনা টাকা পরিশোধ করবে বলে কৌশলে পার্শ্ববর্তী মানস নদীর ধারে ভুট্টা ও ধানের জমির মাঝখানে নিয়ে যান। সেখানে হঠাৎ ইসমাইল তার কোমড়ের পিছনে জ্যাকেটের ভিতরে থাকা ধারালো দা দিয়ে আউয়ালের মাথার নিচে ঘাড়ের উপর সজোরে আঘাত করেন। এসময় আউয়াল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে থাকলে ইসমাইল তার বুকের উপর উঠে গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। নীল বাবু চন্দ্রকে তিনি আউয়ালের পাঁ চেপে ধরতে বলেন। তারপরও মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় ইসমাইল তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে গলায় দুটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

এসময় ইসমাইল আউয়ালের পকেট থেকে বেশ কিছু ৫০০ টাকার নোট বের করে নেন এবং নীল বাবু চন্দ্রের মোবাইল পানিতে পড়ে যাওয়ায় সেটা ঠিক করতে তাকে সাতটি ৫০০ টাকার নোট দেন। এরপর তারা পাশের একটি ড্রেনে রক্তাক্ত দা এবং নিজেদের হাত-পা ধুয়ে যার যার বাড়িতে চলে যান। ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে।

হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, 'আউয়াল এমন একজন যুবক ছিলেন, কারো কাছে ১০ টাকা পেলে, সেই টাকা নিতে পায়ে হেঁটে ৫ মাইল যাওয়া লাগলেও যাবেন। ইসমাইলের কাছে আউয়াল বেশ কিছু টাকা পেতেন। সম্প্রতি আউয়াল বাড়ির কাজ করায় টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি ইসমাইলকে টাকার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। আর এ কারণেই তাকে হয়তো ইসমাইল হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় নীল বাবু চন্দ্রকে আটক করা হয়েছে। তার কাছেই এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং মূল আসামি ইসমাইলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে'।

এর আগে, গত বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় আব্দুল আউয়াল নামের ওই বিকাশ ব্যবসায়ী যুবক ইফতার শেষে বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। অনেক খোঁজাখু্ঁজির পরেও রাতে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে স্থানীয়রা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের মাঠের হাট শ্মশান ঘাট সংলগ্ন একটি ধান খেতে গলা কাটা অবস্থায় আব্দুল আউয়ালের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশকে খবর দিলে আব্দুল আউয়ালের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর থেকেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কাজ করছিল পুলিশ।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ