সময়টা ১৯৭৪ সাল। আরবি ক্যালেন্ডারে পবিত্র মাহে রমজান মাস চলছে। ওই বছরেই সেহেরির সময় মাইক নিয়ে বের হয়ে পড়েন ১৬ বছরের আকবর আলী। নির্জন রাতে শহরের অলি-গলি ঘুরে মুসলমান ভাই-বোনদের সেহেরি খাওয়ার জন্য ডেকে তুলতে মাইকিং করেন। এরপর মাইকিংয়ের ঘটনায় এলাকায় প্রশংসিত হয়। এরপর থেকে প্রতি রমজান মাসে সেহেরির সময় নিয়মিত মাইকিং শুরু করেন আকবর। ২০২৪ সালে রমজানে সেহেরির জন্য মাইকিংয়ের মধ্য দিয়ে এই কাজে ৫১ বছরে পাড়ি দিলেন।

আকবর আলীর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পূর্ব দাপুনিয়া মহল্লায়। জীবিকার তাগিদে ১৯৭৪ সালে পৌর শহরে আকবর মাইক সার্ভিস নামে ব্যবসা চালু করে সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান, ধর্মসভা, বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে মাইক ভাড়া দিতেন।

কোন সম্মানী ছাড়াই ১৯৭৪ সাল থেকে নিয়মিত রমজান মাসে সেহেরির সময় পৌর শহরে মাইকিংয়ের কাজ করে আসছিলেন আকবর আলী। এরপর আশির দশকে তৎকালীন পৌরসভার কমিশনার সৈয়দ আবু সাঈদ এই কাজের জন্য তাকে সম্মানীর ব্যবস্থা করেন। তবে আকবরের দাবি এই কাজটা তিনি সম্মানীর জন্য করেন না। নিজের ভালো লাগা, সৃষ্টিকর্তার সন্তষ্টি ও সওয়াবের জন্যই এই কাজটি করে থাকেন।

আকবর আলীর বয়স এখন ৬৬ বছর। রমজানের প্রত্যেক রাতেই সেহেরির সময় ঘনিয়ে এলেই মাইক নিয়ে বের হয়ে পড়েন। নির্জন রাতে গৌরীপুর পৌর শহরের অলি-গলি ঘুরে মাইকিং করেন। আর এই কাজে তার একমাত্র সঙ্গী রিকশাচালক আব্দুর রশিদ। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অসুস্থতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। তাইতো ৫১ বছর ধরে সকলের কাছে এক পরিচিত কণ্ঠস্বর আকবর আলীর এই ডাক।

গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, আমরা শৈববকাল থেকেই সেহেরির সময় আকবর মাইকিং শুনে সেহেরি খেতে উঠতাম। আশপাশে প্রতিবেশিরা মাইকিং শুনেই সেহেরির জন্য রান্না বসাতো। আর এখন ডিজিটাল যুগ। ঘরে ঘরে ঘড়ি, হাতে মোবাইল, অ্যালার্মের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তারপরেও মনে হয় এখনো আকবর ভাইয়ের মাইকিংটার গুরুত্ব এখনো কমেনি।

আকবর আলী বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে রমজানে সেহেরির সময় মাইকিং শুরু করি। এরপর ৫১ বছরে রমজানে সেহেরির সময় কোনদিন আমি মাইকিং বাদ দেইনি। অসুস্থতা কিংবা বৈরি আবহাওয়া কোনো কিছুই আমাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি আল্লাহর রহমতে। যতদিন বেঁচে আছি প্রত্যেক রমজান মাসেই এই কাজটি যেনো করতে পারি এটাই প্রার্থনা।

চকপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মিলন খান বলেন, আকবর ভাই নিজের বিশ্রাম ত্যাগ করে রমজানে রাত জেগে প্রতিদিন সেহেরির সময় মাইকিং করে মুসলমানদের ডেকে তুলেন। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে তিনি এই কাজটা করে যাচ্ছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।

গৌরীপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজিম উদ্দিন বলেন, রমজানে সেহেরির সময় পৌর শহরের মুসুলমান ভাই-বোনদের ডেকে তোলার জন্য আকবর চাচা ও শরীয়ত চাচা মাইকিং করে থাকেন। এই বছর সেহেরির মাইকিংয়ের মধ্য দিয়ে আকবর চাচার ৫১ বছর হলো। এটা একটা মাইলফলক।

নয়া শতাব্দী/এসআর