ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অনিয়মে একাই একশো সভাপতি মুরাদ, শিক্ষাঙ্গনের মূর্তিমান আতঙ্ক!

প্রকাশনার সময়: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৫

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মুরাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের পাহাড় জমেছে। স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার শেল্টারে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিএনপির এই নেতা এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা।

এমনকি তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বহির্ভূতভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি স্কুলের বিভিন্ন খাত থেকে টাকা আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের পর মামলাও করেছেন ভুক্তভোগীরা।

তাদের মতে, নিয়োগ বাণিজ্য, স্কুল থেকে অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বহু অপকর্ম থেকে বার বার দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। একাধিকবার আর্থিক অনিয়মের প্রসঙ্গ ওঠায় তাকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠলেও অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহীন মুরাদকে। উল্টো আগামী পরিচালনা পর্ষদের নতুন কমিটিতে সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে আবারও নতুন মিশনে নেমেছেন মুরাদ ও তার আশ্রয়দাতা পুলিশ কর্মকর্তা।

১৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পরিচালনা পর্ষদের নিবাচনে তাকে সভাপতি করতে প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়ার কয়েকটি কল রেকর্ড নয়াশতাব্দী প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে নানান ধরনের হুমকি দিতে শোনা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশভাগের বছর দুয়েক পরে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠটিতে ২২-২৩ পরিচালনা পর্ষদে মুরাদ সভাপতি নিবাচিত হন। এরপর থেকে স্কুলটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে, বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আমিনুল ইসলাম নামের এক যুবককে ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন মুরাদ। এই টাকা ফেরত পেতে ওই যুবক আদালতে মামলা করেও, কোনো কূল-কিনারা পাননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী আমিনুলের।

মুরাদের নানা অপকর্মে সায় না দেওয়ায় ১০ মাস বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে না দিয়ে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুলটির সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার।

অভিযোগে তিনি দাবি করেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহীন মুরাদ তার কাছ থেকে একটি মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। সেই টাকা না দেয়ার কারণে তার নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে বেসরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি দাবি করে তিনি আরও বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনে ও ক্রয় কমিটির সঙ্গে শলাপরামর্শ করে স্কুলের উন্নয়ন করা হয়। অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারার কারণে সভাপতি শাহীন মুরাদ তার নামে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ এনে বেসরকারি শিক্ষক চাকরিবিধি না মেনেই তাকে বরখাস্ত করা হয়। এবিষয়ে শিক্ষা বোর্ডে একাধিকবার বৈঠক হলেও পরিচালনা কমিটির লোকজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ কোনো অভিযোগ দাখিল করতে পারেনি। তাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন শাহীন মুরাদ। এমনকি মিথ্যা অভিযোগ এনে চকরিয়া উপজেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও করেন শাহীন মুরাদ।

স্কুলের অভিভাবকরা বলেন, মুরাদের বিরুদ্ধে দিন যাচ্ছে আর অভিযোগের পাহাড় জমা হচ্ছে। স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করতে তিনি একাই যথেষ্ঠ।

তাদের মতে, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার উদগ্র বাসনা চরিতার্থ করতে গত কমিটিতে মুরাদ স্থানীয় এক দুর্নীতিবাজ পুলিশ অফিসারকে ব্যবহার করে যে ভয়াবহতা চালানো হয়, তা এখনো অব্যাহত রেখেছেন নতুন করে সভাপতি হতে। অরাজকতা, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার বৃত্তে স্কুল সংশ্লিষ্টদের বন্দি করা হয়েছে।

পেশীশক্তির জোরে গত কমিটিতে সভাপতি হতে ষোলকলা পূর্ণ করলেও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে থেমে নেই শিক্ষকসহ প্রার্থীদের ওপর বহুমাত্রিক জুলুম, উৎপীড়নের অমানবিক নিষ্ঠুরতা। প্রচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একেকটি কক্ষকে শ্বাসরুদ্ধকর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। অতিমাত্রায় উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তার গেস্টাপোদের ন্যায় মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন মুরাদ।

অভিযোগের বিষয়ে বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শাহীন মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ