কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুলের সালেহ আহমদ পাড়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এক প্রবাসীর বসতবাড়িতে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন দুজন। এ ঘটনায় পুলিশ ২ জনকে আটক করেছে।
শুক্রবার (১৬ মার্চ) গভীর রাতে উপজেলার কলঘর বাজার সংলগ্ন চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পশ্চিম পাশে সৌদি প্রবাসী ওবাইদ উল্লাহর বসতবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একই গ্রামের আব্দুল হালিম মেম্বারের ছেলে হত্যা মামলার আসামী বহু অপকর্মের হোতা আহমদ কামাল তার ভাই মোস্তফা কামাল ও তাদের লোকজন হামলা ও ভাঙচুরের তাণ্ডব চালায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রবাসী ওবাইদ উল্লাহ ২০১৭ সালে দক্ষিণ মিঠাছড়ির আবু বক্কর পাড়ার আব্দুল খালেক নামের এক ব্যক্তির পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫ শতকের বেশি (১৬ কড়া) জমি ক্রয় করে ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের পর বসবাস করে আসছেন। কিন্তু গত ৪ মাস আগে স্থানীয় শামসুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি পাশের কিছু জমি ক্রয় করেন। ওবাইদ উল্লাহ প্রবাসে থাকার সুযোগে তার বসতভিটায় জমি রয়েছে দাবি করেন সামসুউদ্দিন। এরপর থেকে প্রবাসীর স্ত্রী অসহায় তফুরা বেগমের কাছ থেকে ওই বসতবাড়ির জমি নিজের দাবি করে আসছেন। এমতাবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারির ১৯ তারিখ শামসুউদ্দিন, আহমদ কামাল ও তার ভাই মোস্তফা কামালসহ একদল পেশাদার সন্ত্রাসী প্রবাসীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ভেঙ্গে দেওয়া হয় সীমানা দেয়ালও। এ সময় দিনে-দুপুরে বাড়ির জিনিসপত্রসহ উঠানের গাছ কেটে পিকআপে করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। এতে তফুরা বেগম থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি।
ভুক্তভোগী তফুরা বেগম বলেন, ‘জমিটি ক্রয়ের পর আমাদের নামে ৩৬৯১ ও ৪৯৬৫ নম্বরে দুটি খতিয়ানও সৃজন হয়। এরপর থেকে নিয়মিত খাজনা প্রতিশোধ করে গত ৮ বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছি। কিছুদিন আগে শামসুউদ্দিন পাশের জমি ক্রয়ের পর আমার কাছে তার জমি রয়েছে দাবি করে তা ছেড়ে দিতে নানা হুমকি দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় গত জানুয়ারির ১৯ তারিখ আমার বসত বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট করে জমি ছেড়ে না দিলে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এতে আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রামু একটি জিডি করি। যার নং-৩৫। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কক্সবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করি। আদালত তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। সুযোগ নেয় আমার অসহায়ত্বের। শুক্রবার অসুস্থ শ্বাশুড়ি ও ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে ঘরের ভেতর ঘুমে ছিলাম। মধ্যরাতে হঠাৎ মৃত শফির ছেলে শামসুউদ্দিন, আব্দুল হালিম মেম্বারের ছেলে আহমদ কামাল ও তার ভাই মোস্তফা কামাল, আবু তাহেরের ছেলে মো: রাসেল, জাকের আহমদের ছেলে জসিম উদ্দিন ও আবু তালেবের ছেলে মিজানুর রহমানসহ একদল পেশাদার ভাড়াটে সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। আমাকে লম্বা বন্দুক দিয়ে আঘাত করে শ্বাশুড়ির শরীরে ইটের আঘাত লেগেছে।’
তফুরা আরও বলেন, ‘ঘরের ভেতর ও বাইরে দুই জায়গাতেই ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেতরে ঢুকে স্বর্ণ, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। এই পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন আহমদ কামাল। শামসুউদ্দিন ভাড়াটে লোকজন নিয়ে জমি দখল নিতে গিয়ে ওই ঘটনা ঘটান। এতে শ্বাশুড়িসহ আমি গুরুতর আহত হয়েছি। এসময় নিরুপায় হয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শামসুউদ্দিনসহ তার এক সহযোগীকে আটক করে নিয়ে যায়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
আহমদ কামাল স্থানীয় আনোয়ার শাহ হত্যা মামলার আসামী; এই ঘটনায় তারা দুই ভাই ভাড়াটে হিসেবে কাজ করছেন উল্লেখ করে স্থানীয়রা বলেন, কয়েক মাস ধরে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে একই এলাকার শামসুউদ্দিনের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে গতকাল রাতে দেশীয় অস্ত্র ও লোকজন নিয়ে আহমদ কামাল হামলা চালায় প্রবাসীর বাড়িতে। অথচ তার এখানে কিছুই নেই। আমরা বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা শুনে ভেবেছিলাম অল্প ভেঙেছে, এখন দেখছি অমানবিক কাণ্ড। একটি অসহায় মহিলার আশ্রয়স্থলে ঢুকে লুটপাট, ভাংচুর গুঁড়িয়ে ফেলা, এটা চরম অন্যায়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী তফুরা।
রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান জানান, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এতে আদালতের একটি নির্দেশনাও রয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ