বছর তিনেক আগে জীবিকার তাগিদে অবৈধপথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে মারা যান দিনমজুর বাবা। এরপর বড় সন্তান হিসেবে সংসারের হাল ধরতে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুল এলাকায় একটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ নেন মো. ইকবাল হোসেন (২৫)। সেখানে কাজ করে ভালই চলছিল ইকবালের। দেড় বছর আগে বিয়েও করেন তিনি। ইতোমধ্যে পাঁচমাস বয়সি একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছেন।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গত ৭ মার্চ রাত ৯টার দিকে ওই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ইকবালসহ চার শ্রমিক দগ্ধ হন। দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে টানা ৬ দিন চিকিৎসাধীন থেকে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) গভীর রাতে মারা যান ইকবাল। ইকবাল ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে। নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিহতের মামা গোলাম হায়দার বলেন, ইকবালের বাবা অবৈধপথে বিদেশে গিয়ে মারা যান। তারপর আমার ভাগ্নে পরিবারের হাল ধরেন। কিন্তু সেও আজ লাশ হয়ে ফিরে এলো। বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে তার মরদেহ বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে বেলা ১১ টাকা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। তিনি আরও বলেন, চিন্তা করছি ওদের সংসারটা কিভাবে চলবে। এখন নেবে কে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানের দায়িত্ব?
গট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান লাবলু বলেন, পেটের তাগিদে মুন্সীগঞ্জের গিয়ে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করতেন সালথার চার যুবক। সেখান থেকে আয় করে কোন রকমে চালাতেন তাদের সংসার। ওদের রুটি-রুজির সেই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে দুই জনের জীবন শেষ হয়ে গেছে। বাকি দুই জনও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুল এলাকায় জে কে নামে একটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সালথার ওই চার যুবক আহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় দগ্ধরা হলেন, সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের লক্ষনদিয়া গ্রামে রিয়াজুল ফকির (৩৭), পাশের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের রাকিব হোসেন (২৫) ও মতিউর রহমান (৩৩)। এর মধ্যে রিয়াজুল ফকির গত ৮ মার্চ রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সংসারের একমাত্র উপার্জকারী ছিলেন রিয়াজুল। তার মৃত্যুতে দুই মেয়ে সন্তান ও স্ত্রী চরম বিপদে রয়েছে।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ