পানের বরজকে ঘিরে স্বপ্ন নিমিশেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই। আগামী দিনগুলো কিভাবে চলবে একথা চিন্তা করেই কাঁদছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
রোববার (১০ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকা এ আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক কৃষকের প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রতি বিঘায় ক্ষতি হয়েছেপ্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। এতে শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর পানের বরজে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিরা। তারা এই পানের বরজকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছিলেন। সব হারিয়ে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আগুনে রায়টা থেকে শুরু করে গোসাইডাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা তীর ঘেঁষা প্রায় ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকার চারটি গ্রামের শত শত চাষির পান পুড়ে গেছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার (১১ মার্চ) সকালে সরেজমিন ভেড়ামারা রায়টা ও গোসাইডাঙ্গায় গেলে সন্তানের মতো করে পানের বরজের যত্ন নেয়া মাধবপুর এলাকার নয়ন নামে এক পান চাষি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আমাদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার দুই বিঘা জমিতে পানের বরজ ছিল। আগুনে পুড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এলাকার কৃষকদের ৯০ ভাগই পান চাষের সাথে জড়িত। সবাই মহাবিপদে পড়ে গেছি। সরকারের কাছে সাহায্য চাচ্ছি।
কাঁদতে কাঁদতে পান চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলের চাষিরা বেশিরভাগই পান চাষ করেন। চারটি গ্রামের শত শত কৃষকের প্রায় চার থেকে ৫ হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। আনুমানিক শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি মাঠে পানের বরজে কাজ করছিলাম। এ সময় শুনলাম রায়টা মাঠে পানের বরজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মুহূর্তের মধ্যেই বাতাসের গতিতে এক বরজ থেকে আরেক বরজে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সাথে স্থানীয়রাও আগুন নেভানোর কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত বাতাসের কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের পাশে সরকারকে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
রবিউল আরও বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে তিন লাখ টাকার পান ছিল। পান কয়েকদিন পরে তোলার কথা ছিল। কিন্তু আমার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সহজে পানের বরজ করতে পারব না। এ রকম বরজ করতে দুই বছর লাগবে।
ক্ষতিগ্রস্ত এক পান চাষির মা ও স্ত্রী বরজে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে পান চাষির স্ত্রী বলেন, ‘ওআল্লাহ, এখন আমরা কী করে খাব, কী করে চলব। আয়ের একমাত্র সম্বল পানের বরজটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ধার দেনা করে পানের চাষ করেছিলাম আমরা। আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেল। এখন আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব। আমাদের বরজের সব পান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার স্বামী একটা পানও তোলেনি, একটা পানও বিক্রি করিনি। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। আমার স্বামী সারাদিন এই বরজে কাজ করতো আর স্বপ্ন দেখতো। সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি আমার স্বামীকে কীভাবে বুঝ দিব আল্লাহ।’
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, শত শত পান চাষির কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। রায়টা থেকে শুরু করে মাধবপুর পর্যন্ত পুড়ে গেছে। প্রায় তিন থেকে চার হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া আগুনে হতাহতের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। আনুমানিক তিন হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রচন্ড বাতাস ও পানি সংকটে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ