ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

নানা সংকটে বন্ধ হচ্ছে হাসকিং চাতাল-মিল, বাড়ছে বেকারত্ব

প্রকাশনার সময়: ১১ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৬

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান ও চালের মূল্যের ব্যবধান থাকায় ও অটোরাইস মিলের দাপটসহ আর্থিক লোকসানে টিকতে না পেরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার হাসকিং মিল-চাতাল মালিকদের দুর্দিন চলছে। ভরা রোপা-আমন ও ইরি-বোরো মৌসুমে চাহিদা মতো ধান পেলেও চালের দাম দফায় দফায় উঠা-নামার কারণে উত্তর জনপদের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত ফুলবাড়ী উপজেলার ড্রাম বয়লারের হাসকিং মিলগুলো প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।

বর্তমান বাজার দরে ধান কিনে চাল বাজারে বিক্রি করতে গেলে ধান ক্রয় ও চালের বিক্রির মধ্যে সমন্বয় না থাকায় লোকসানের কারণে ইতোমধ্যেই উপজেলার অর্ধশত হাসকিং রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এই মিল চাতালগুলোতে এক সময় শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল থাকলেও নানা সংকটের কারণে মিলগুলো বন্ধ হওয়ায় কয়েক হাজার কর্মী কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে অভাব অনটেনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আবার অনেকে জীবিকার তাগিদে পেশা বদলে অন্য পেশায় যাচ্ছেন।

জানা গেছে, আশির দশকের শুরুতে ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় েহাসকিং মিল-চাতাল তৈরি করে চালের ব্যবসা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই রমরমা ব্যবসা হওয়ার সুবাদে কিছু উদ্যোমী ব্যবসায়ীরা পর্যায়ক্রমে উপজেলায় ১৩৯টি খাদ্য বিভাগে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকল আছে। এরমধ্যে ১০টি অটোমেটিক রাইস মিল রয়েছে। এই চাতালগুলোতে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হতো তা দিয়ে এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হতো। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ী যেমন তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে লাভবান হতো তেমনি এই চাতালগুলোতে সৃষ্টি হয়েছিল কয়েক হাজার দরিদ্র নারী ও পুরুষ

শ্রমিকের কর্মসংস্থান।

এর সঙ্গে সম্পৃক্ত চাল ব্যবসায়ী ও মালিক-শ্রমিকদের অনেকেই দারিদ্রতা জয় করে পুঁজিপতি বনে গেছেন। কিন্তু আধুনিকতার উৎকর্ষে অটোরাইস মিলের দাপটে বাজারে টিকতে না পাড়ার কারণে পুঁজি হারানোর আতঙ্কে সেই সুদিন এখন দুর্দিনে পরিণত হতে চলেছে। অনেকে এই ব্যবসায় অধিক পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করে নানান হতাশাই চালের মতো সুনাম খ্যাত ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

গত বছর রোপা আমন মৌসুমে অটোরাইস মিল, ক্ষুদ্র চাতাল ও হাসকিং মিল ব্যবসায়ীদের ধান একই মূল্যে কিনলেও চাল ভাল মূল্যে বিক্রি করতে না পাড়ায় তারা লোকসনের মুখে পড়েন। সেই কারণে অটোরাইস মিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে চাতাল ব্যবসায় মন্দার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ চাতাল শ্রমিক। এসব চাতাল ও মিল রক্ষায় সরকারি বেসসরকারি পর্যায়ে ঋণ সহায়তার দাবি জানান চাতাল মালিকরা।

উপজেলার নলপুকুর এলাকার কেডি রাইস মিলের স্বত্ত্বাধিকারী চাতাল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, বাজার থেকে ধান কিনে যে পরিমাণ চাল হয় সেই মোতাবেক বাজারে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা লোকসনের ঘানি টানতে টানতে ব্যবসা চালু রাখা কঠিন হওয়ায় বিশেষ করে হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তৈরি চাল আর অটোরাইস মিলের চালের দর প্রকার ভেদে প্রতি মণে একশত থেকে দেড়শ টাকা বেশি। অথচ বাজার থেকে ধান কেনার সময় প্রায় একই দরে কেনা- কাটা হয়।

উপজেলা চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ হাসকিং মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক চালকল মালিক। এর মূল কারণ অটোরাইস মিলের প্রাধান্য। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে চালকলগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৩০০টি হাসকিং মিলের সমান কাজ করে এক- একটি অটোরাইস মিল। বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোকে সচল করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ বরাদ্দ ও ভর্তুকির মাধ্যমে মিলগুলোকে আধুনিক মেশিনারিজ দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মঈন উদ্দিন বলেন, উপজেলায় খাদ্য বিভাগের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৩৯টি চালকলের মধ্যে হাসকিং ১২৯টি এবং অটোরাইস মিল ১০টি। এরমধ্যে সরকারের চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মাত্র ৯০ জন চালকল মালিক। অটোরাইস মিলের চালের

মানের সঙ্গে হাসকিং মিলের তৈরি চাল কিছুটা নিম্নমানের হওয়ায় চলমান বাজারে টিকতে পারছে না। কিন্তু যারা হাসকিং চাতাল মিল ব্যবসায়ী আছেন, বর্তমান ধানের বাজার মূল্যের সঙ্গে চালের দাম সমন্বয়হীনতার কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান দেখা

দেয় বলে তিনি জানান।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ