পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া- দুর্গাপুর) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারাকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় দলের একাংশের নেতাকর্মীরা এ আয়োজন করেন। এতে দলের জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতিসহ অনেকেই যোগ দেননি। অথচ অনুষ্ঠানের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ লেখা হয়। কিন্তু উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুষ্ঠান হলেও ছিলেন না দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রমুখ।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে বক্তব্য দেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম। তবে রাজশাহী-৩ আসনের বর্তমান এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই বক্তব্যে দলীয় বিভক্তি সামনে এসেছে। রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ তো বক্তব্য দিতে গিয়ে তার নিজ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে প্রকাশ্যেই গালিগালাজ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিল কুমার সরকার দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এনামুল হকের কাঁচি প্রতীকের পক্ষে ছিলেন। সে কথা তুলে ধরে এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কাঁচির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলাম
ভাই। এই এলাকার যারা হ্যাডাম নেতা, তারা গিয়ে বলে- ‘উমুক ভাইয়ের সালাম নিন, কাঁচি মার্কায় ভোট দিন।’ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, এদেরকে বলতে চাই, একজন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাঁচিতে ভোট করে কি করে!’এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দিতে বলেন, ‘আজ থেকে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ মুক্ত বলে ঘোষণা করা হলো। রাজশাহীর আকাশে যে অমাবশ্যা ছিল, সবসময়ই অমাবশ্যা, সব সময়ই সূর্যগ্রহণ-আজকে থেকে আর কোনো সূর্যগ্রহণ রাজশাহীর আকাশে কাজ করবে না। আমরা করতে দেব না। আমরা আওয়ামী লীগকে সমস্তরকম অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্ত ঘোষণা
করলাম। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশকে স্বাধীনতার জন্য, ভাসানীর আন্দোলন করার জন্য। আওয়ামী লীগ আজকে সকল মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো এবং একে (রাজশাহী) মুক্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হলো। আওয়ামী লীগের নেতাকমীর্রা মাথা উঁচু করে চলবে। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি ছাড়া আর কোনো বাঘ আমরা দেখতে চাই না। আমরা
আজকে প্রথম ‘ট্রায়াল’ করলাম এবং এরপরে আমরা আরও অনেক কিছু দেখাব বলে প্রত্যাশ করছি।’প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘ফারুক ভাই বললেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আজ মুক্ত হলো। কেন বললেন এ কথাটি তার সারমর্ম রয়েছে। কী এমন রাজনৈতিক নেতা (সংসদ নির্বাচনে দারার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী) আমার আসনে নৌকার বিরুদ্ধে এত ভোট পায়? তার রাজনৈতিক পরিচয় কি? একটাই কারণ, তার টাকা আর তার পেছনে রাজনৈতিক মহাশক্তি। পুঠিয়া-দুর্গাপুরে কে আছে এত যোগ্য? আমি নিজের কথা বলছি না। দুঃখে, কষ্টে, যন্ত্রণায় বলছি। আমার পুঠিয়া-দুর্গাপুরের বহু নেতাকে এই শহরের কিছু নেতা মুনাফেক বানিয়েছে, বেঈমান বানিয়েছে, চরিত্রহনন করেছে। আর তা হবে না।’
অনুষ্ঠানে না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘এই গণসংবর্ধনার ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। দলের ক্ষুদ্র একটি অংশকে নিয়ে এই ধরনের গণসংবর্ধনা দলকে বিভক্ত করেছে। নিশ্চয় এই খবর দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাবে।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ চিঠি দিয়ে কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও আমাকে এই গণসংবর্ধনার বিষয়ে জানায়নি। গণসংবর্ধনায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিরাই ছিলেন না। দলের খণ্ডিত একটা অংশ এই গণসংবর্ধনা করেছে। তারা সামান্যতম রাজনৈতিক সৌজন্য বা ভদ্রতায় শহীদ কামারুজ্জামানের ছবিটাও ব্যবহার করেনি। তারা গণসংবর্ধনার নামে দলের ভেতরের গ্রুপিং দেখালেন। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী কাউকে প্রতিমন্ত্রী করেননি। এটা তারা কী করল- ভবিষ্যতই তার উত্তর দেবে। মহানগর আওয়ামী লীগের মূল স্রোত তো আমরাই। ৯৫ শতাংশ তো আমাদেরই সঙ্গে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। তা না করে দলীয় বিভক্তি নিয়ে এই ধরনের গণসংবর্ধনার অনুষ্ঠান সাধারণ মানুষের কাছে অনৈক্যের বার্তা দেবে।’
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ