সাতক্ষীরার দেবহাটায় সাইমা খাতুন (১৮) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (৯ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে গৃহবধূ সাইমা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার স্বামী তানজিন ইসলামকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত সাইমা খাতুন উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে তানজিন ইসলামের (২৪) স্ত্রী। সাইমা খাতুনের বাবার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া মৌখালি গ্রামে।
জানা যায়, শ্বশুর আব্দুস সবুর পরিচালিত পারুলিয়া জামিয়া ইসলামিয়া ফয়জুল উলুম মহিলা মাদরাসায় পড়াশুনাকালীন গত ৬/৭ মাস আগে পারিবারিকভাবে সাইমা ও তানজিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পরও সাইমা খাতুন হাফেজি মাওলানা পড়াশুনা অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি মাত্র ৮ মাসে সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ মুখস্থ করে কোরআনে হাফেজ হয়েছিলেন বলে দাবি স্বজনদের।
সাইমার মা রাবেয়া খাতুন জানান, ‘রাত ১২টার দিকে মেয়ে সাইমা খাতুন গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে বেয়াই আব্দুস সবুর তাদেরকে ফোন করেন। ঘণ্টাখানেক পর তারা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে সাইমা খাতুনকে মৃত অবস্থায় দেখেন। হঠাৎ অসুস্থতার কারণে সাইমার মৃত্যু হয়েছে বলে সেসময় তাদেরকে জানান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জামাতা তানজিন তার মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলে জানতে পারেন তারা। এঘটনায় সুষ্ঠ বিচার দাবি করেছেন তিনি’
এদিকে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন দিলে রাত দেড়টার দিকে দেবহাটা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাইমার মরদেহ উদ্ধার করে। সঙ্গে স্বামী তানজিনকে গ্রেপ্তার করে। ওই রাতে সাইমা ও তানজিনের বাড়িতে অবস্থানরত জিন-ভূতের ঝাড়-ফুক করা আব্দুস সেলিম নামের এক গুনিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
সাইমার শ্বশুর আব্দুস সবুর জানান, ‘জিনের আছর থাকায় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন ছেলে তানজিন ইসলাম। মাসে দু-এক বার উন্মাদ হয়ে উঠতো সে। তখন গুনিন দিয়ে ঝাড়-ফুক করলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যেত তানজিন। শুক্রবার দুপুরে তানজিন আবারও উন্মাদ হয়ে উঠলে ঝাড়-ফুকের জন্য আশাশুনি থেকে গুনিন আব্দুস সেলিমকে বাড়িতে ডাকেন তিনি। স্বাভাবিক হওয়ার পর রাতের খাবার খেলে ছেলে তানজিন ও পুত্রবধূ সাইমা একত্রে ঘুমাতে গিয়েছিল। আর গুনিন আব্দুস সালামকেও রাতে ওই বাড়িতে রাখা হয়েছিল। রাত ১২টার দিকে ছেলে তানজিনের ডাকে ঘুম থেকে উঠে পুত্রবধূ সাইমাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে পুত্রবধূ সাইমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বেয়াইয়ের বাড়িতে ফোন করেন।’
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী সাইমা খাতুনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তানজিন ইসলাম। সাইমার গলা ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সাইমার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ