বেসরকারি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অ্যাকাউন্ট করাতে এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী (৩২)। ওই সময় তুলে রাখা বিবস্ত্র ছবির ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে এখন নিয়মিত যৌনতায় বাধ্য করতে নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা।
প্রস্তাবে রাজি না হলে নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। সম্মানের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না নির্যাতনের শিকার ওই নারী। পেশায় ইনস্যুরেন্সকর্মী ভুক্তভোগী ওই নারী চাটমোহর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর গুরুদাসপুরে ইনস্যুরেন্সের কাজে আসেন তিনি। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের কামরুজ্জামান সোনা (৬৭) নামের এক ব্যক্তি তাকে ইনস্যুরেন্স খোলার জন্য গুরুদাসপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে একটি তিনতলা ফ্লাটে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আরো দুই যুবক। তাকে ওই ফ্লাটের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে কামরুজ্জামান সোনা প্রথমে ধর্ষণ করেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন আবুল কালাম আজাদ নামের এক যুবক। সেইসঙ্গে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে তিনিও ধর্ষণ করেন। পরে ফিরোজ আহম্মেদ নামের আরেক যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেন তাকে। একপর্যায়ে পায়ুপথে বিকৃত যৌনাচার করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারী এ ঘটনার বিচার চেয়ে সম্প্রতি গুরুদাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে শুক্রবার (৮ মার্চ) অভিযুক্তদের ছবি হাতে সংবাদকর্মীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।
লিখিত ওই অভিযোগে জানা যায়, ফিরোজ আজম্মেদ নামের এক যুবক ওই নারীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে জ্ঞান ফিরলে আবারো তাকে ধর্ষণ করেন আবুল কালাম আজাদ। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় অভিযুক্তরা কামরুজ্জামান সোনাকে মারধর করে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। পরে রাত ৮টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইন্টারনেটে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোয় এতোদিন অভিযোগ করতে পারেননি ওই নারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারীর বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলায়। তার আয়েই চলে চার সদস্যের সংসার। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ইনস্যুরেন্সের কাজে ছুটে চলেন। সেই দুর্বলতার সুযোগ নেন একই এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান সোনা। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবি। গুরুদাসপুরেও চাকরি করেছেন। সেই সুবাদে অভিযুক্ত ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে পরিচয়। ফিরোজ আহম্মেদ গুরুদাসপুর পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার মৃত তোফায়েল আহম্মেদের ছেলে। ফিরোজের এক সহযোগী আবুল কালাম আজাদ গুরুদাসপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের প্রভাষক। তিনি উপজেলার রওশনপুর এলাকার বাসিন্দা। ভাড়া থাকেন গুরুদাসপুর পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। অপর সহযোগী রনি আহম্মেদ চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা এলাকার বাসিন্দা। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে গুরুদাসপুর বাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, অভিযুক্তরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগে থেকেই কামরুজ্জামান সোনার সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তা বুঝতে পারেননি। তাকে ফাঁকি দিয়ে ডেকে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। নিজের সঙ্গে হওয়া এই নির্যাতনের বিচার দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আবারো যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন অভিযুক্তরা।দলবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়ে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সোনা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এছাড়া অপর তিন অভিযুক্তের মধ্যে ফিরোজ আহম্মেদ ও আবুল কালাম আজাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে রনি আহম্মেদ গা ঢাকা দেওয়ায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন বলেন, থানার অদূরে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা দুঃখজনক। ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ