কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার গোমাতলী এবং পোকখালীতে সরকারি গেজেটভুক্ত বনবিভাগের তিন শতাধিক একর প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ করেছে ২১ দখলদার। সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনে এসব জমি বেদখল হলেও তা উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন করে প্যারাবন দখলের মহড়া চলছে। দখল ছাড়তে নোটিশ দিয়ে ও দখলদারের তালিকা করে দায়িত্ব শেষ করছে বনবিভাগ। প্যারাবন ধ্বংস হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি উপকূলীয় এলাকা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বনবিভাগের দাবি, উপর মহলের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেবে তারা।
তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরে প্যারাবন সৃষ্টি ও উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করতে সরকার ২০১৭ সালের ১ জুলাই কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার গোমাতলী এবং পোকখালী মৌজার ৩২২ একর জমি বনবিভাগকে বরাদ্দ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। এরপর বনবিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি জমি দখল ছাড়তে বিভিন্ন সময় নোটিশ দেয়া হয় দখলদারদের। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর দখল ছাড়তে চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয় দখলদারদের।
কিন্তু বনবিভাগের কোনো নোটিশ আমলে নেয়নি অবৈধ দখলদার। উল্টো নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় প্যারাবন কেটে ভূমি দখল করেছে তারা। এ অবস্থায় দখলদারদের তালিকা চেয়ে উপকূলীয় বনবিভাগকে চিঠি দেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। নির্দেশনা পেয়ে গোমাতলী মৌজার ৫৫২৫, ৫৫১১ দাগ এবং পোকখালী মৌজার ৭২০১ দাগসহ কয়েকটি দাগে অবৈধ দখলদার হিসেবে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
যেখানে হাজী আব্দুল মান্নানের ছেলে হান্নান মিয়া, মৃত আলী আকারের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সুজাউল আলম, অজি উল্লাহর ছেলে আব্দুল গফুরের (বর্তমানে জমিটি দখলে আছেন ইসলামের ছেলে ফরিদুল আলম) দখলে আছে প্রায় শত একর জমি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গেজেটভুক্ত জমি উদ্ধার করতে পদক্ষেপ নেয়নি বনবিভাগ।
এদিকে গত ২ মার্চ গোমাতলী হান্নান মিয়ার ঘোনার পশ্চিমে জেগে ওঠা চর পরিদর্শনে যান উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সহকারী বন সংরক্ষক, গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও পোকখালী বিট কর্মকর্তা। এ সময় নতুন তৈরি করা একটি বাঁধ ভেঙে দেয়া হয়।
উপকূলীয় বনবিভাগের পোকখালী বিট অফিসের বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা দখলদারের চূড়ান্ত একটি তালিকা করে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। উচ্ছেদ মামলা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্যরাবনে নতুন করে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলাও করা হয়েছে।
নিজের দখলে থাকা চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠের জমি বনবিভাগের স্বীকার করে দখলদার হান্নান মিয়া বলেন, জমিটি আমাদের জেলা প্রশাসক লিজ দিয়েছিল। আমরা এখনো সে মতে ভোগ করে আসছি। ২০২১ সালের দিকে দখল ছাড়তে বনবিভাগের একটি নোটিশ পেয়েছিলাম।
উপকূলীয় বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শেখ আবুল কালাম আযাদ বলেন, কয়েক যুগ আগে যেসব জমি বেদখল হয়েছে তা উদ্ধার করা আমাদের জন্য দুরূহ! তারপরও দখলদারদের চূড়ান্ত তালিকা করে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংসদীয় কমিটি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সে মতে আমরা কাজ করব।
তবে নতুন করে যেন দখল না হয় সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। গেজেটভুক্ত জমিতে যারা অবৈধ দখলে আছে তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করতে বিট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ