২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সকালে ভাড়া বাসায় মায়ের কাছ থেকে ৪ মাস ২০ দিন বয়সের ছোট শিশু রায়হানকে আদর করার কথা বলে নাম পরিচয়হীন এক নারী কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুজির পর না পেয়ে থানায় করা হয়েছে একটি লিখিত অভিযোগ। চুরির দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি সেই শিশুটি।
এদিকে, নিজ সন্তানকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়েছে মা-বাবা। কবে ফিরে পাবে তাদের সেই সন্তানকে সেই প্রতিক্ষায় পথ চেয়ে আছে তারা। সন্তানকে ফিরিয়ে পেতে সকলের কাছে করছেন আকুতি মিনতি।
শিশুটির বাবা নুর আমিন জানান, সে নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৩ মাস পূর্ব থেকে স্ত্রী, ছোট এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার আড়িয়াবো এলাকায় মাহাবুবুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। কাজ করেন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায়। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর পরিচয় হয় নাম পরিচয় না জানা আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী এক মহিলার সাথে। মাত্র ৭দিন আগে তাদের পাশের সামাদ নামক এক ব্যক্তির ভাড়া বাড়িতে ভাড়ায় উঠেন সেই নারী। তিনি নুর আমিনকে ডাকেন ধর্মভাই। সেই সুবাদে পরিবারের সবার সাথে তৈরি হয় সু-সর্ম্পক।
এদিকে ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সেই নারী মাছ নিয়ে বেড়াতে আসেন ‘ভাইয়ের’ বাসায়। নুর আমিনের স্ত্রী সালমার কোল থেকে সেই তিনি ৪ মাস ২০ দিন বয়সী শিশু রায়হানকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে মাকে মাছ কাটতে পাঠায়। সেই সুযোগে শিশু রায়হানকে কোলে নিয়ে ঘরের বাহিরে বের হয়ে যায় সেই নারী। মাছ কাটার পর আর তাকে দেখতে না পেয়ে আশপাশে খুজঁতে থাকেন সবাই। বহু খোঁজার পর না পেয়ে ৯৯৯ এর কল করে সহায়তা চায় শিশুটির পরিবার। পুলিশ এসে কোন হদিস না পেয়ে চলে যায়।
এঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা নুর আমিন। এদিকে পুলিশ তদন্ত করে একটি সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে শিশুর বাবা নুর আমিনের সাথে হেঁটে যাচ্ছে সেই নারী এমন একটি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তবে সংগ্রহ করতে পারেনি তার নাম ঠিকানা বা কোনো মোবাইল নম্বর।
এদিকে রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলার কপি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে র্যাব, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই এর কাছে গিয়েও নুর আমিন পায়নি কোনো সহায়তা। অপরদিকে, রূপগঞ্জ থানা পুলিশ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় চুরি হওয়া শিশুটিকে খোঁজে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর মাহাবুবুর রহমান জাকারিয়া জানান, নিজ ঘর থেকে একটি শিশু চুরির ঘটনাটি শুনেছি। চুরি হওয়ার ২ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পুলিশ উদ্ধার করতে না পারায় অনেকটা হতাশ তিনি। তিনি শিশুটিকে উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। এমনকি তার কোনো সহায়তা প্রয়োজন মনে করলে তিনি করবেন বলে জানান।
এসময় তিনি সকল বাড়ির মালিককে বাসা ভাড়া দেওয়ার আগে অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড, মোবাইল নম্বর নেওয়া জন্য অনুরোধ করেন।
এব্যাপারে নারায়ণগগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবির হোসেন বলেন, ৪ মাস ২০ দিন বয়সী শিশুকে এক নারী নিয়ে গেছেন এমন সংবাদ পেয়ে সাথে সাথে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। আমরা শিশুটিকে উদ্ধার করতে সব রকম চেষ্টা করছি। একটি সিসি ফুটেজ ছাড়া মহিলার কোনো কিছু পাইনি। তার সঠিক পরিচয়, মোবাইল নম্বর না পাওয়ায় শিশুকে খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে।
আমরা সব জায়গায় খোঁজ লাগিয়েছি। এমনকি যদি কেউ নারীর পরিচয় ও শিশুটির কোনো সন্ধান দিতে পারে পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে এমন ঘোষণাও দিয়েছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা রাখি তাড়াতাড়ি শিশুটির খোজঁ পাবো বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ