ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

শিশু তামিমের খেলনা নিয়ে ফেরা হলো না বাবার

প্রকাশনার সময়: ০৪ মার্চ ২০২৪, ২১:৫১
ছবি- সন্তানকে বুকে নিয়ে কাদঁছেন মিনা খাতুন

বাবা খেলনা নিয়ে ফিরবেন, ছোট্ট শিশু তামিমের (৪) এই অপেক্ষা দুই বছরের। বাবা মাফিজুল (২৫) যখন নিখোঁজ হয়েছিলেন, তার বয়স তখন দুই বছর। এই দীর্ঘ সময়ে বাবার কথা মনে হলে মা মিনা খাতুন তাকে সান্ত¡না দিতেন। তিনি বলতেন টাকা-পয়সা আয় করে বাবা ফিরবেন তামিমের জন্য খেলনা নিয়ে। তবে ছোট্ট শিশুটি জানে না বাবা খুন হয়েছেন। আর খেলনা নিয়ে ফিরবেন না।

বাবার শেষ পরিণতির কথা শিশু তামিম বুঝতে না পারলেও নিখোঁজের দুই বছর পর মিনা খাতুন জানতে পেরেছেন স্বামী খুন হয়েছেন। স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মিনা খাতুন। সন্তানের শোকে কাতর হয়েছে পড়েছেন মা-বাবা।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মাফিজুল ইসলাম নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের খলিফাপাড়া মহল্লার আজাদ প্রামাণিকের ছেলে। পিতা-মাতা, ছোট দুই ভাই-বোন ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে ছিল মাফিজুলের সুখের সংসার। বাড়ির ভিটার ১১ কাঠা জমি ছাড়া খেত খামারে তাদের কোনো জমাজমি নেই।

মাফিজুলের বাবা আজাদ প্রামাণিক জানান, দিনমজুরি করে মাফিজুল ও মাহফুজকে বড় করেছেন তিনি। বড় ছেলে মাফিজুল রঙ মিস্ত্রি এবং ছোট ছেলে মাহফুজ একটি জুতার দোকানে কাজ করতেন। বাবা ছেলের আয়ে তাদের ছয় সদস্যের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু বছর দুয়েক আগে বড় ছেলে মাফিজুল হঠাৎ নিখোঁজ হন। তখন থেকে সন্তানের শোকে রুগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।

তিনি জানান, স্ত্রী-সন্ত্রানকে ভরণপোষণ করতে ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালানো শুরু করেছিলেন মাফিজুল। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন ছেলে মাফিজুল ফিরে আসবেন তাদের বুকে। কিন্তু রোববার (৩ মার্চ) সন্তানের হাড়গোড় পাওয়া গেল। এখন তাদের ৫ সদস্যদের পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল। আসামিদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি তার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ মে নিখোঁজ হন মাফিজুল। সন্তানকে খোঁজখুঁজি করে সন্ধান না পাওয়ায় গুরুদাসপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন নিহত মাফিজুলের মা। মাফিজুল ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিবেশী জাকির মুন্সির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছেলের শেষ পরিণতির বিষয়ে জানতে পারে মাফিজুলের পরিবার। শুক্রবার গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার মা মাইনুর বেগম। এরপর রোববার দুপুরে চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদরাসার শৌচাগারের মেঝে খুঁড়ে মনদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলায় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রোববার মাফিজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাফিজুলের মরদেহ উদ্ধারের খবর শুনে স্ত্রী-স্বজনেরা আহাজারি করছেন। মা মাহিনুর বেগম ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে ছেলের শোকে চিৎকার করে উঠছেন। বাবা আজাদ প্রামাণিক কোনো কথা বলছেন না। বাবাকে হারিয়ে নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে ছোট্ট শিশু তামিম।

মাফিজুলের স্ত্রী মিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মাফিজুলের সাথে তার বিয়ের পাঁচ বছর। পাঁচ বছরের সংসারে একমাত্র সন্তান তামিমকে (৪) নিয়ে দিনের পর দিন স্বামীর অপেক্ষায় কাটিয়েছেন। ভেবেছিলেন স্বামী ফিরবেন। কিন্তু এখন নিশ্চিত হয়েছেন স্বামী হত্যাকাণ্ডের শিকার। স্বামী হারিয়ে এখন নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ