কক্সবাজার সদর থেকে অপহৃত মাদরাসা শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলামকে (১৫) ফিরে পেতে সংঘবদ্ধ চক্রকে মুক্তিপণ হিসেবে দেড় লাখ টাকা দেয়ার পরও ফেরত পেলেন না একজন মা। উল্টো জানাতে পেরেছেন মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার আগেই এই শিক্ষার্থীকে পাচার করা হয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রের মিয়ানমারের সিন্ডিকেট। বর্তমানে এই কিশোর মিয়ানমারেই জিন্মি রয়েছেন।
এ ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৫ এর অভিযানে আটক সংঘবদ্ধ চক্রের ২ রোহিঙ্গাসহ ৩ জন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, শনিবার রাতে উখিয়া উপজেলার থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এই ৩ জনকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, উখিয়ার ১২ নম্বর ক্যাম্পের আলী হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৩৪), একই ক্যাম্পের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে আমিন উল্লাহ (১৯) ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরী পাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. তারেক (১৮)।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি চকরিয়া ফাঁসিয়াখালি দারুল উলুম মাদরাসার ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলাম নিখোঁজ হন উল্লেখ করে র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, সম্প্রতি নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মা কক্সবাজার সদরের নাছিমা ইয়াসমিন একটি অভিযোগ করেন। যেখানে বলা হয়েছে, চকরিয়া ফাঁসিয়াখালি দারুল উলুম মাদরাসার ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার বড় ছেলে রাশিকুল ইসলাম মাদরাসা থেকে ছুটিতে বাড়ি আসে গত ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন বিকেলে তার ছেলে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ছেলেকে নিকটস্থ আত্মীয় স্বজন ও সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে জানায়, রাশিকুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। এরপর একাধিক মোবাইল নম্বরে অপহরণকারীদের পর্যায়ক্রমে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়া হয়। এরপর পুনরায় আরও দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
অভিযোগটি র্যাব পাওয়ার পরপরই নানাভাবে কাজ শুরু করে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিসহ নানা সহযোগিতায় শনিবার রাতে এই ৩ জনকে আটক করা হয়। এসময় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ১টি স্মার্ট ফোন, ১টি বাটন ফোন ও ১টি রবি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছেন মো. তারেক কৌশলে রাশিকুল ইসলামকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওখান থেকে পরিকল্পনা মোতাবেক একটি সিএনজিযোগে টেকনাফে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ অপহরণ চক্রটির অপর এক সদস্যের নিকট হস্তান্তর করে। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতেই ওই শিক্ষার্থীকে মিয়ানমারে পাচার করে দেয়া হয়। ওই অপহৃত শিক্ষার্থী এখন মিয়ানমারে জিন্মি।
এ ব্যাপারে মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে আটক ৩ জনকে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ