ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

আদালতের আদেশ অমান্য করে জমি দখল, স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা

প্রকাশনার সময়: ০৩ মার্চ ২০২৪, ২০:০৪

কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তর ফতেখাঁরকুল চালাইন্যা পাড়া এলাকায় চিহ্নিত একটি ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি ওই স্থানে খাস জমিসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে আদালতের আদেশ অমান্য করে জমি দখল করে মাটি ভরাটের পর স্থাপনা নির্মাণের পাঁয়তারা করে।

অভিযোগ উঠেছে, ভূমিদস্যু চক্রটির অপতৎপরতা থামাতে জমি মালিকরা ১৪৪ ধারা জারি করেও থামাতে পারছেন না তাদের। এই চক্রের মূলোৎপাটন করতে অভিযানের পর অভিযান চালিয়েও তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন।

মামলার নথি ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের উত্তর ফতেখাঁরকুল চালাইন্যাপাড়ার বাসিন্দা মৃত বখতার আহম্মদ গংদের ওয়ারিশ হাজেরা খাতুন, আমান উল্লাহ, আনছার উল্লাহ ও মো. শহিদুল ইসলামের ভোগ দখলে থাকা ৯২ শতক জমি অবৈধ দখলের জন্য পাঁয়তারা করে আসছিল উত্তর ফারিকুল এলাকার মৃত সায়ের আহমদ প্রকাশ সায়রার মেয়ে উত্তর ফতেখাঁরকুলের মাসি খ্যাত রেজিয়া আক্তার, তার ভাই আবদু শুক্কুর, তার স্ত্রী হাছিনা বেগম। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে উত্তর ফতেখাঁরকুল এলাকার আবদু জব্বারের ছেলে খোরশেদ আলম, আবুল কাশেমের ছেলে মোতাহের হোছেন, মোজাহের মিয়ার ছেলে পেঠান আলী, আনুজু আরাসহ একটি চক্র।

এ অবস্থায় তারা জমিটি দখলের অপ-তৎপরতা চালালে বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করে ভুক্তভোগীরা বেশ কয়েকবার রামু থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

পুলিশের নিষেধ উপেক্ষা করে রেজিয়া আক্তার, তার ভাই আবদু শুক্কুরসহ চক্রটি দরিদ্র লোকজনের এ ভূমি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এতে নিরূপায় হয়ে জমির মালিক হাজেরা খাতুন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে এমআর মামলা করেন। মামলা নম্বর ৯৯২/২০২৩। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জমি দখলকারী আব্দু শুক্কুর ও রেজিয়া আক্তারসহ চক্রটিকে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব ও জমি দখলের কাগজপত্রসহ আদালতে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে নালিশি জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে সেজন্য রামু থানার ওসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এমন নির্দেশনার পরও রেজিয়া-শুক্কুর চক্রটি ওই জমিতে গিয়ে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত মাস খানেক ধরে প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসী মতাদর্শে বিশ্বাসী রেজিয়া-শুক্কুর ওই জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণে লিপ্ত হন। যা চলমান রয়েছে। ফলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরও এমন ঘটনায় চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছেন জমির মালিক হাজেরা খাতুন, আমান উল্লাহ গংরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিবদমান জমিতে আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও তা অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণ কাজ যাচ্ছেন চক্রটি। জমির মালিকানা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশা দিলেও চক্রটি তা মানছেন না।

আদালতের আদেশ না মানার বিষয়টি রামু থানা পুলিশকে জানানোর পর ঘটনাস্থাল পরিদর্শনে আসে পুলিশ। তবে পুলিশ আসার খরবে ভূমিদস্যু চক্রটি কিছুক্ষণের জন্য পালিয়ে গেলেও পুনরায় চালিয়ে যান তাদের দখল কার্যক্রম।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, জমি দখলে নিতে অস্ত্রধারী দাগী আসামিদের দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে মহড়া চালিয়ে জমিতে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করছেন ভূমিদস্যুরা। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চালাইন্যাপাড়ার মাসি খ্যাত রেজিয়া আক্তার ও তার ভাই আবদু শুক্কুর। আদালতের আদেশ ও নির্দেশনার অনুবলে রামু থানা পুলিশ সংশ্লিষ্টদের বিরোধপূর্ণ জায়গায় কোনো প্রকার কার্যক্রম চালাতে নিষেধ করলেও ভূমিদস্যুটি চক্রটি এ নিষেধ না শুনে একের পর এক দখল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিজের জমি দখল নিতে ভীত সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি আমরা।

এ অবস্থায় অসহায় ভূমি মালিকরা প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আশঙ্কা করছেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের।

সরেজমিনে জানা যায়, সম্প্রতি আব্দু শুক্কুর ও রেজিয়া আক্তারের নেতৃত্বে জমিটি দখলের পর মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ইট, বালিসহ নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করেছে। এরই মধ্যে জমি মালিকরা রামু থানা পুলিশকে অবগত করার পর পুলিশও আসে বেশ কয়েকবার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পুলিশ আসার খবর পেয়ে কিছুক্ষণ দখল কার্যক্রম বন্ধ রেখে পালিয়ে যায়। পুনরায় ফিরে আবার শুরু করে দখল কার্যক্রম।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আদালতে বিচারাধীন এ বিষয়টি রামু থানা পুলিশ ও উপজেলা ভূমি অফিস অবগত আছেন। তারা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়েও যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, এ অবস্থায় দখলবাজদের বাঁধা দিতে গেলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে এসব দরিদ্র পরিবারগুলো বেশ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে উল্লেখ করে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, রহস্যজনক কারণে প্রকৃত ভূমিদস্যু ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারায় চক্রটি এ ধরনের বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা জানান, একটি শক্তিশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট রেজিয়া-হাসিনার পেছনে রয়েছে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ