ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন কৃষিযন্ত্র দোন-সেঁউতি

প্রকাশনার সময়: ০২ মার্চ ২০২৪, ২০:৫৯

চাঁদপুরের কচুয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন কৃষিযন্ত্র দোন-সেঁউতি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতায় প্রতিটি শাখা আধুনিকায়নের ফলে যন্ত্র সভ্যতার জাঁতাকলে বিলুপ্তির পথে কৃষিযন্ত্র।

আগেকার দিনে জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা জন্য ব্যবহার করা হতো টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন। স্থানীয়রা সেঁউতিকে পানি সেচের হেইত ও দোনকে দোংগা বলে জানেন। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের দোন ও টিনের সেউতিসহ অন্যান্য চিরচেনা কৃষি উপকরণ সামগ্রী। এক সময় গ্রাম-বাংলার কৃষিতে সেচযন্ত্র হিসেবে টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোনের ব্যাপক চাহিদা ছিল। টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সেঁউতি দিয়ে খাল বা নিচু জমি থেকে ওপরে পানি সিঞ্চন করা হতো। আর উঁচুনিচু জমিতে পানি সেচ দিতে সেচযন্ত্র কাঠের দোন ছিল অতুলনীয়।

গ্রাম-বাংলার কৃষকরা আদিকাল থেকেই চিন্তা চেতনার ফসল হিসেবে আবিষ্কার করেছিল এ কাঠের দোন। আম, কাঁঠাল জাতীয় গাছের কাঠের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝখানে কাঠের ড্রেন তৈরি করে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এতে করে পানি সেচ দিতে শ্রমিক ছাড়া কোনো প্রকার খরচ হয় না। তা ছাড়া এটি সহজে বহনীয়। দোনে সেচ দেওয়া খুব মজার কাজ। একটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দিতে হয়। এক অংশে দোনের মাথা অন্য অংশে মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে এক সঙ্গে অনেক পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি তুললে দ্রুত সেচের কাজ হয়।

সুশীল সমাজ ও সচেতন মহলের মতে, আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি সভ্য সমাজ ও নতুন প্রজন্মের চেনার জন্য চালু করা প্রয়োজন।

উপজেলার উত্তর ডুমরিয়া সরকারি (মডেল) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. শামিম জানায়, সে কখনো দোন বা সেঁউতি দেখেনি। তবে বই পড়ে জানতে পেরেছে কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়।

ডুমুরিয়া গ্রামের কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম (৫০) জানান, ‘আমি বাপ-দাদাদের দোন ও সেঁউতি ব্যবহার করে সেচকাজ করতে দেখেছি। এ জন্য শখের বশে একটি সেঁউতি তৈরি করে তা দিয়ে পানি সেচ দিয়েছি।’

একই গ্রামের মো. এমরান (৫৫) জানান, ‘আগে আমরা দোন-সেঁউতি দিয়েই সেচ চালাতাম। এখন আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি আসায় এগুলোর ব্যবহার হয় না।’

চাষিরা বলেন, আধুনিক যন্ত্র তাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে এই ধরনের সহজলভ্য কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মেজবাহ উদ্দিন জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে আমাদের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। একসময় দোন ও সেঁউতি দিয়ে কৃষকরা তাদের জমিতে পানি সেচ দিতো। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে সেচ কাজে ব্যবহৃত হারিয়ে যাওয়া দোন ও সেঁউতি গ্রাম বাংলার এতিহ্য তুলে ধরতে হবে। এই ধরনের সহজলভ্য পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ