‘পরিবার বা নিকটাত্মীয়-স্বজনদের অজান্তে নিজ পরিচয়কে তুচ্ছজ্ঞান, গোপন, পরিবর্তন বা ছদ্মনাম ধারণের পরিণতি শুভকর হয় না’ বলে মন্তব্য করেছেন বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) নিকটাত্মীয় ও শিক্ষাগুরু কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, বৃষ্টি খাতুন ২০১৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক শেষ করে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে মানবিকে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে দর্শনে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। সর্বশেষ অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা চলছিলো তার।
আনুমানিক ৪-৫ মাস আগে হঠাৎ বৃষ্টি খাতুন ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নাম ধারণ করে একটি ফেসবুক আইডি খোলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পোস্টের ছবিগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মালম্বী বন্ধুদের আধিক্য এবং ওই বন্ধুদের সঙ্গে হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায় তাকে। ফেসবুকের এসব ছবিই আজ জনমনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে, তার জীবনের শেষ পরিণতিতেও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। ফলে মৃত্যুর পরও তার মরদেহ নিয়ে পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সে কারণে আপনি যেই হোন না কেন, আপনার সঠিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) মাধ্যমিক শিক্ষক সফিকুল ইসলাম।
ছাত্র জীবনে বৃষ্টি খাতুন পড়ালেখায় বেশ মেধাবী ছিলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ওর স্বপ্নগুলো ছিল উচ্চমাত্রার। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করবে বলে অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার পাশাপশি প্রস্তুতিও নিচ্ছিল।
‘অথচ এক উচ্ছৃঙ্খল এলোমেলো জীবন বৃত্তে চলতে গিয়ে পা পিছলে ছিটকে পড়ে ঝরে গেলো একটা সম্ভাবনাময় প্রতিভা’ বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারান দ্য রিপোর্টের নির্বাচন কমিশন বিটের সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী (প্রকৃত নাম বৃষ্টি খাতুন)। তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় শুরু হয় শোকের মাতম।
এলাকাবাসীসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই ভিড় করেন তাদের বাড়িতে। নিহত বৃষ্টির মাকে শান্তনা দেবার ভাষা হারিয়েছেন প্রতিবেশীরা। নিহতের মা বিউটি বেগম ও ছোট দুই বোন একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ঝর্ণা খাতুন ও দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা খাতুনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন।
বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুল মজিদ বৃষ্টি খাতুনের অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, বৃষ্টি মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী ছিলো। অথচ নিজের পরিচয় জটিলতায় আজ পরিবার পরিজনকে তার মরদেহ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হলো। একটা মানুষ মৃত্যুর পরও আত্মপরিচয় জনিত কারণে সম্মানহানির শিকার হয় বৃষ্টি খাতুনের ঘটনা এর একটা দৃষ্টান্ত।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দারিদ্র পিতার তিনটিই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে নিহত বৃষ্টি খাতুন, মেজো মেয়ে ঝর্ণা খাতুন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী, আর ছোট মেয়ে বর্ষা খাতুন স্থানীয় বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহতের মা বিউটি খাতুন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন মেয়ের মরদেহ পানে। কন্যা হারানোর শোকে কাতর বিউটি খাতুন নির্বাক হয়ে পড়েছেন।
তবে ছোট বোন বর্ষা খাতুনের ভাষায়, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে মোবাইলে সর্বশেষ বৃষ্টির সঙ্গে কথা হয়। পার্ট টাইম জব হিসেবে বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও, ওর খরচের টাকা বাড়ি থেকেই পাঠাতো মা। আজ ওর মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্যদিয়ে আমাদের পরিবারের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো।’
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ